গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে এস এস সি ২০১৬ পাসকৃতদের ভর্তি নিয়ে শঙ্কা

ভর্তি পরীক্ষা

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার আবেদন চলছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা লকডাউন শেষে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া একইসঙ্গে আবেদনের যোগ্যতাও শিথিল করা হয়েছে।

আবেদনের সময় বাড়ানো এবং যোগ্যতা শিথিল করা হলেও এ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে আছেন দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। তবে আবেদন শেষে পরীক্ষা আয়োজন ছাড়া নতুন কোন বিষয় নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ বছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য। তবে গুচ্ছ কমিটির একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের।

পূর্বে আবেদনের যোগ্যতায় এসএসসি ২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালের কথা বলা হলেও চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাসকৃত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের বছরগুলোর আবেদন প্রক্রিয়ায় বিগত বছর থেকে এ ধরণের পার্থক্যে আবেদনের সুযোগ ছিল। যা গুচ্ছভুক্ত হওয়ার পর থেকে বাদ হয়ে যায়।

সিরাজগঞ্জের রাশিদোজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা নূর-ই জান্নাত বলেন, গুচ্ছ পরীক্ষা না হলে আমরা যারা এসএসসি ২০১৬ এবং এইচএসসি ২০১৯-২০২০ সালের সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ছিলাম তারা গুচ্ছভুক্ত এসব অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নিতে পারতাম। কিন্তু গুচ্ছের আওতাভুক্ত হওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী আমরা ভর্তি যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তারা দ্বিতীয়বারের প্রার্থীদের সুযোগ দিচ্ছে না।

জান্নাত বলেন, অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি আবেদনের যোগ্যতায় যাদের ২০১৬ এবং এইচএসসি ২০২০ তাদেরও ২০২১ সালে সুযোগ দিচ্ছে।

কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার দ্বিতীয়বার ভর্তি আবেদনের সুযোগ নেই। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ থাকলেও আবেদন করা যাচ্ছে না। এ বাস্তবতায় উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ নিয়ে আমাদের সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা প্রাথমিক আবেদন করতে পারবেন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের যে যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে সেটির ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছেন।

এটা কমিটির সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই দেয়া হয়েছে। প্রথমে যে বিজ্ঞপ্তির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে ভুলবশত। সেটি আমাদের কোন অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি ছিল না।

বিগত সালের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার অনুযায়ী, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রার্থীদের যারা এসএসসি ১৬ ও এইচএসসি ১৯-২০ সালের সমমানের পরীক্ষার্থী ছিলেন তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়েও আবেদনের সুযোগ ছিল। যা গুচ্ছের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে বাতিল হয়ে যায়।

সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী মো. শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ​গুচ্ছ পরীক্ষা না হলে আমারা যারা ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, তারা গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬টিতে আবেদনের সুযোগ পেতাম। গুচ্ছের প্রথম টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ২০১৬ সালে এসএসসি পাসকৃতদের আবেদনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তিতে সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। যা অমানবিক। কাজেই আমাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হোক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়গুলো নিয়ে এর আগে কেউ আমাদের বলেনি।

পয়েন্ট নিয়ে আমাদের বলা হয়েছিল আমরা সেটিতে শিথিলতা এনেছি। এছাড়া সবমিলিয়ে এখন আমরা আবেদন শেষ হওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। বাকি অন্যকোন বিষয়ে এখন আর নতুন করে ভাবার সে ধরনের সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক প্রশস্ত হয়েছে। দেশে অনেক টেকনিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।

সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দারুণভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। আমরা চাই না আমাদের কোন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার ‍সুযোগ থেকে বঞ্চিত হোক। তারা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন। এছাড়া যাদের সামর্থ্য হবে; অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখান থেকে তারা তাদের পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অংশ নিতে পারেন।