৯০ ভরি স্বর্ণ লুট: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ ৩ জন রিমান্ডে

রাজধানীর কোতয়ালীতে ৯০ ভরি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মুন্সিগঞ্জ জেলার একজন সহকারী পরিচালকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

ওই সহকারী পরিচালকের নাম সাকিব হাসান। অন্য ৪ জন সিপাহী। তারা ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে এই অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) ওই কর্মকর্তা ও তার ২ সহযোগীকে আদালতের নির্দেশে ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় বাকি ২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া কর্মকর্তার নাম এস এম সাকিব হোসেন। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক।

(১৭ জানুয়ারি) রোববার বিভিন্ন সময়ে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েন চলে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

সাকিব হোসেনের উল্লেখযোগ্য দুই সহযোগী হলেন- কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম এবং সোর্স হারুন। জানা গেছে, এস এম সাকিব হোসেন ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নিয়োগ পান।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ  বিভাগের ছাত্র ছিলেন। যশোরের ছেলে সাকিব থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব বিজয় তালুকদার ডাকাতির অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেছেন।

এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য তিনি দিতে চাননি। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আদালত সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি সাকিব হোসেন, সেপাই আমিনুল ইসলাম ও সোর্স হারুন রাজধানীর জিন্দাবাহার লেনের একটি স্বর্ণের দোকানে যান। ডিবি পরিচয়ে তারা ওই দোকানের মালিককে তুলে নিয়ে যান এবং ৯০ ভরি স্বর্ণ লুট করেন।

এ ঘটনায় ১২ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মামলা করেন। পুলিশ প্রথমে দোকানের একজন কর্মচারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গত সোমবার তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতে তারা ডাকাতির ঘটনায় সাকিব হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা জানান।

তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে সোমবারই পুরান ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাকিব হোসেনকে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জের সহকারী পরিচালক এস এম সাকিব হোসেন ১৭ জানুয়ারি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বেসিক ক্রিমিনাল ইনটেলিজেন্স অ্যানালাইসিস কোর্সে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন। এই কোর্সটির মেয়াদ ৩ মাস।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, সাকিব হোসেন নবীন কর্মকর্তা হলেও দাপটের সঙ্গে চলতেন, তাঁর সেপাই আমিনুল ইসলামও কাউকে বিশেষ পাত্তা দিতেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নাম সাকিব শিকদার।

সেখানে তিনি নিজেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানের ছবি ও ছাত্রলীগের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পোস্ট করেছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনের মধ্যে স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় ২ জন গত সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্য ছাড়াও আরও অনেকে জড়িত রয়েছেন। জবানবন্দিতে তাদের অনেকের নামও এসেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। ২-৩ দিন পর তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।