ফারদিন ধর্ষণ করেছে কিনা তা টেস্টের পর বলা যাবেঃ পুলিশ

দিহান জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে কিনা বা সম্মতিক্রমে যৌনকর্ম করেছে তা টেস্টের পর জানা যাবে: পুলিশ

দিহান জোরপূর্বক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে কিনা বা সম্মতিক্রমে যৌনকর্ম করেছে তা ফরেনসিক ও সোয়াব টেস্টের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান।

আজ শুক্রবার দুপুরে এক ব্রিফিং-এ এমনটা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এর পেছনে অন্যকেউ ছিলো কিনা সেটাও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুরতহালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীর শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

রাজধানীর সোবহানবাগে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। কোচিংয়ের নোট আনতে যাওয়ার কথা বলে কলাবাগানে বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানের বাসায় যায়।

সেখানেই ‘ধর্ষণের’ শিকার হয়ে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজ গাড়িতে করে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় দিহান। হাসপাতালে ভর্তির আগেই সেখানকার চিকিৎসক আনুশকাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) নিজের সোবহানবাগের বাসা থেকে কলাবাগানে বন্ধু দিহানের বাসায় যায় আনুশকা।

সেখানে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি, আনুশকা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বন্ধুর ভাষ্যমতে, এরপর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করার আগেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ দিহান নামে ওই ছেলেটিকে আটক করি। এরপর তাকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক মেলামেশা হয়। এরপর ওভার ব্লিডিং হয়, এ কারণে আনুশকা সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

তবে দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা সাপেক্ষে প্রমাণের বিষয়। এর বাইরে অন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা সেটি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিসি বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা আল আমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে দিহান নামে ওই একজনই আসামি, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

তবে এ ঘটনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের বিনীত অনুরোধ করতে চাই, ভিকটিমের পরিবার বুঝে-শুনে মামলা করেছে। এরপরও এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কিংবা অন্য কোনো ইন্ধন থাকলে সেটা আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবো। তাই সবাইকে এটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত না করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

মামলায় বাদীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাদী বলেছেন, আমার মেয়েকে তার বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এটা তাদের দাবি। ধর্ষণ হয়েছে কিনা তদন্তের ব্যাপার, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এছাড়া ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ময়নাতদন্তের চিকিৎসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে কিনা বা অন্য কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বাসায় ডেকে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ডেকে নেওয়া হয়েছে কিনা মামলাতেও উল্লেখ নেই বা তার বন্ধুও স্বীকার করেনি। দিহানের বাবা রাজশাহীতে চাকরি করেন ও ভাই নারায়ণগঞ্জে চাকরি করেন।

কলাবাগানের ওই বাসায় মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন দিহান। গত বৃহস্পতিবার সকালে তার মা বগুড়া যান। আমরা অনুমান করছি, বাসা ফাঁকা থাকায় আনুশকাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাতেই নিহতের বাবা মো. আল-আমিন বাদী হয়ে আনুশকার প্রেমিক দাবিকারী ইফতেখার ফারদিন দিহানকে একমাত্র আসামি করে মামলাটি করেন। গ্রুপ স্টাডির কথা বলে কলাবাগানের ডলফিন গলির একটি বাসায় নিয়ে আনুশকাহ নূর আমিন (১৮) নামে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগে জানা যায়।

আজ শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আবুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

আমরা তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের ভূমিকা কী ছিল জানার চেষ্টা করেছি। যদি তারা জড়িত হয় তাহলে মামলায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নিরাপরাধ হলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

কিশোরীর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে নির্মমভাবে মারা হয়েছে। রক্তক্ষরণ হয়েছে, ওর হাতে দাগ আছে। আমি বিচার চাই, কেন আমার মেয়েকে এভাবে মারা হলো। আমার মেয়ের বান্ধবীর ভাই বলেছে, ওই ছেলেকে তারা চেনে। আগেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে, ওর আচরণ ভাল না।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও বাসা থেকে বের হন।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বের হয়েছিল।

দিহান ৬৩/৪ লেক সার্কাস ডলফিনগলি পান্থপথ কলাবাগানের বাসায় নিয়ে যায় তাকে।

এ মামলার একমাত্র আসামি আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

অফিস থেকে বের হয়ে ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।

প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশের এসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই তরুণ দাবি করেছে, মেয়েটি তাঁর পূর্বপরিচিত। বাসার সবাই রাজধানীর বাইরে থাকায় তাকে ডলফিন গলির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।

একপর্যায়ে তাঁদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুরতহাল প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

এরআগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কলাবাগানের ডলফিন গলির এক বাসায় রাজধানীর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর চার সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আটক ফারদিন ইফতেখার দিহান গ্রুপ স্টাডির কথা বলে তাকে বাসায় ডেকে নেয়। পরে অসুস্থতার কথা বলে দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে ওই ছাত্রীকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেয়। পরে তার তিন বন্ধু সেখানে উপস্থিত হয়।

ডাক্তাররা জানান, তার আগেই ওই ছাত্রী মারা যায়। অভিযুক্তরাই পুলিশকে ফোন দিয়ে এ ঘটনার কথা জানায়। পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নেয়া হয়।