কলাবাগানে ও-লেভেল শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, বন্ধুসহ আটক ৪, ধর্ষণের অভিযোগ পরিবারের

রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ও-লেভেল পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। নিহত কিশোরীর নাম আনুশকাহ নূর আমিন (১৭)। সে মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ছাত্রী।

এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ আনুশকাহর প্রেমিক দিহানসহ চারজনকে আটক করেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় এই ঘটনা ঘটে। আনুশকাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু আনুশকাহকে ধানমন্ডির মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বিকালে হাসপাতালে আনুশকাহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

চিকিৎসকরা বলছেন, আনুশকাহর শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

তার পেটের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে কলাবাগান থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) ঠাকুর দাস বলেন, ওই ছাত্রীর বাসা ধানমন্ডির সোবহানবাগে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ছাত্রী তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কলাবাগানের ডলফিন গলিতে দিহানের বাসায় যায় ওই ছাত্রী।

দিহানের বাসা তখন ফাঁকা ছিল। সেখানে ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহান তার তিন বন্ধুকে ফোন করে ডেকে আনে।

পরে তারা অসুস্থ ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য মডার্ণ আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিকালে তার মৃত্যু হয়।

হাসপাতালে তার সঙ্গে তিনজন এসেছিলো, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে দুই মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ওই কিশোরীর চাচা শরীফ মাহমুদ বলেন, সকালে তাকে কলাবাগানের এক বাসায় ডেকে নিয়ে যায় তারই এক বান্ধবী। সেখানে উপস্থিত থাকা তার বন্ধুরা মিলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে এক পর্যায়ে হত্যা করে।

পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে তারা নিজেরাই মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নিহতের পরিবার জানায়, গ্রুপ স্টাডির কথা বলে আনুশকাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আনুশকা সকালে নিজেই তার মাকে জানায়, পড়াশোনার প্রয়োজনে তাকে বাইরে যেতে হবে।

পরে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে দিহান নিজেই আনুশকার মাকে ফোন করে জানায়, আনুশকা অসুস্থ। এরপর আবার দিহান ফোন করে জানায়, আনুশকা মারা গেছে।

সেখানকার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পরিবার জানায়, আনুশকাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তার মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষণের ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে, কলবাগানের ডলফিন গলির ওই বাসা থেকে নানা আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইহসানুল ফিরদাউস বলেন, এই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজনসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।

তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি-না সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান বলেন,

‘আজ একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে, মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা উদ্ধারকৃত মরদেহের আইন অনুযায়ী সুরতহাল করছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমরা খবর পাই আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেলে এক কিশোরীর মরদেহ আছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তারা আমাদের জানালে আমরা দ্রুত রেসপন্স করি। আমরা সেখানে গিয়ে দেখতে পাই এক কিশোরীর মরদেহ আছে। তার সঙ্গে একজন ছিল।’

তিনি জানান, এ ঘটনায় আমরা এক যুবককে আটক করেছি এবং তার তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কী জানতে পেরেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা এখন তদন্তের পর্যায়ে আছে। ছেলের পরিবারের কেউ বাসায় ছিল না। সে একাই ছিল। আমরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছি, বিশেষ করে আর কেউ জড়িত আছে কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক যুবক জানিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল… এ ঘটনায় সে একা জড়িত বলে জানিয়েছে। ঘটনা ঘটেছে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে যুবকের বাসায়।

আমরা সেখান থেকে আলামত জব্দ করেছি এবং সেগুলো প্রোফাইলিং করছি। আমরা সকল দিক খতিয়ে দেখছি। যাতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে প্রকৃত দোষীকে শনাক্ত করে তাকে কঠোর আইনের আওতায় আনতে পারি।’

প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়া দিহানের বাসা থেকেও উদ্ধার হওয়া আলামতে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

‘ঘটনাস্থল থেকে আমরা রক্তাক্ত দাগযুক্ত আলামত জব্দ করেছি … পুলিশ ভুক্তভোগীর শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি,’ বলেন তিনি।

দিহান মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে এ লেভেল শেষ করেছে। আর আনুশকা ও লেভেলের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে, ভুক্তভোগীর মায়ের দাবি, তিনি তার মেয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন।

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।