মেডিকেলে সেকেন্ড হয়ে যাবো ভাবিনি

যখন চান্স পাওয়ার সংবাদটা শুনি, তখন আমার মনে হয়েছিল আমি বুঝি পৃথিবীর সবচাইতে বড় সম্পত্তিটা পেয়ে গেছি। আমার মনে হয় না পাওয়ার আর কিছু নেই’- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া উম্মে শেফা আইরিন বলছিলেন উচ্ছ্বাসভরা কন্ঠে।

চট্টগ্রামের মেয়ে আইরিনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় স্কোর ছিলো ৮৫.৭৫। বাবা শাহ মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মা নূর নাহার বেগম। এসএসসি ও এইচএসসি দিয়েছেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে।

ভর্তি পরীক্ষার আগেই তার আত্মবিশ্বাস ছিল যে, মেডিকেলে অবশ্যই চান্স পাবেন। কিন্তু এত বড় সাফল্য যে তার হাতে ধরা দেবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।

আইরিন বলছিলেন,

জানতাম চান্স পাবো। কিন্তু কোথায় পাবে সেটা নিয়ে কোন প্রেডিকশন ছিল না। তবে সেকেন্ড হয়ে যাবো, সেটা কখনোই ভাবিনি।

ডাক্তারি করতে চাওয়ার ইচ্ছেটা তিনি অনেক দিন ধরেই পুষছেন। কিন্তু কেন ভালো লাগে, সে প্রশ্নের জবাবে আইরিন বলতে থাকেন, ‘এই পেশাটাকে আমার ছোটবেলা থেকে ভালো লাগে।

কেন ভালো লাগে, বলতে পারবো না। হয়তো মানুষের হাসিমুখ দেখতে ভালো লাগে তাই, হয়তো কারো দুঃখের দিনে তার পাশে দাঁড়াতে ভালোবাসি তাই; তবে আমার আব্বু-আম্মুর একটা স্বপ্ন ছিলো, তাদের মেয়ে ডাক্তার হোক।

আমি শুধু চেয়েছি, আব্বু-আম্মুর স্বপ্নটা যেন পূরণ করতে পারি’।

আগামীতে যারা মেডিকেল ভর্তি হতে চান তাদের জন্য আইরিনের পরামর্শ আপাতত এইচএসসি পরীক্ষাটা ভালো করার।

কারণ, এইচএসসি পরীক্ষায় এ প্লাসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে উদাহরণ টেনে উম্মে শেফা আইরিন বলেন, ‘আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল। আমার ব্যাচেই ছিল।

প্রথম দিকে সে খুবই ভালো করতো। কখনও সে ফার্স্ট হতো আর কখনও আমি ফার্স্ট হতাম। আমাদের দুই জনের মধ্যেই ফার্স্ট-সেকেন্ড হতাম। আমাদের দুইজনের মধ্যে খুবই কম্পিটিশন ছিল।

পরে রেজাল্টে দেখা গেল ওর ৪.৫৯ আসলো। অর্থাৎ, তার ১১ নাম্বারের মতো কাটা গেছে। গোল্ডেন পাওয়াটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য জরুরি, কিন্তু মেডিকেলের জন্য অতটা না’।

আইরিন কথা বলেন এক নাগাড়ে। আন্তরিক স্বরে বলতে থাকেন, ‘এইচএসসি বইটা সম্পর্কে ভালো আইডিয়া থাকলে পরে তেমন একটা সমস্যা হবে না।

আমার সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল যে, আমার ৬টা বই সম্পর্কে ভালো আইডিয়া ছিল। আমি কোশ্চেন দেখেই বলতে পারতাম এটা ওই পেজ থেকে এসেছে, ওই প্যারা থেকে এসেছে।

বই সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা ছিল। তবে আমার টেনশন ছিল-ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে। কিন্তু সেদিন প্রশ্ন নিয়ে নিজের কাছেই অবাক হচ্ছিলাম এতকিছু পারছি কেমন করে’?

আইরিন জানেন না, কিভাবে এতো চমৎকার একটা রেজাল্ট এলো, কিন্তু তিনি জানেন, তিনি পরিশ্রম করেছেন।

ভবিষ্যতে কি হবেন সেটা এখনই আইরিন ঠিক করেন নি, তবে ইচ্ছে আছে কার্ডিওলজি বা নিউরোলজি নিয়ে পড়াশোনা করার।

স্টেথোস্কোপ কাঁধে নিয়ে, আপন অস্তিত্বটুকু সফেদ এ্যাপ্রনে ঢেকে মেডিকেল আঙিনায় উম্মে শেফা আইরিনের পদচারণা শুভ হোক।

তাঁর যাপিত দিনের গল্পে অনুপ্রেরণা খুজে নিক সবাই। আইরিনের জন্য সহস্রবেলার শুভকামনা।

উম্মে শেফা আইরিন

জাতীয় মেধায় ২য়(২০১৮-১৯)

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২০১৮