ভর্তি পরীক্ষাটা আসলে ভাগ্য ও ধৈর্যের পরীক্ষা

ফারহিন মাহমুদ

“ভর্তি পরীক্ষা টা আসলে যেমন পরিশ্রম, চেষ্টার উপর নির্ভর করে ঠিক তেমনি ভাগ্য পরীক্ষা ও ধৈর্য্য পরীক্ষা ও বটে।

২০১৮ সালে বাবা – মা ও নিজের ইচ্ছার কারনে মেডিকেল ভর্তি কোচিং শুরু করেছিললাম কিন্তু কোচিং শুরুর কিছুদিন পরে এত কম্পিটিশন, এত এত ক্যান্ডিডেট দেখে আমার মধ্যে না টিকার ভয় তৈরী হয়েছিল অনেক বেশি।

তার সাথে যোগ হয়েছিল প্রচুর ল্যাক ওফ সেল্ফ কন্ফিডেন্স, এর সাথে ছিল এইচ.এস.সি ১৮ ব্যাচ এর ফিজিক্স সেকেন্ড পেপার এর ঢাকা বোর্ড এর প্রচণ্ড বাজে প্রশ্নের জন্য আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার এ+ আসবেনা 🙂।

এর পর আমার মনে হয় যে মেডিকেল এ টিকতে না পারলেও আমি যেন কোনো পাবলিক এ পড়ার সুযোগ পাই, প্রায় ১.৫ মাস পর মেডিকেল কোচিং এর পাশাপাশি ভার্সিটি কোচিং শুরু করি( এটা ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল)।

যার জন্য আমার প্রিপারেশন টাইম আর ইফোর্ট দুইভাগে ভাগ হয়েগিয়েছিল।  চেষ্টা আমি করেছিলাম অনেক কিন্তু হয়তো পুরো সময় একদিক এ কনসানট্রেটেড থাকা উচিৎ ছিল আমার।

অনেক মেধাবীরা পারে সব জায়গাতেই একইসাথে ভালো ফলাফল করতে কিন্তু সবাই তো আর পারে না। 😅

এখানেও আমার নিজের এবিলিটি বুঝতেও আমারই ভুল টা হয়েছিল।

তারপর ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিলাম,প্রশ্ন অনেক কঠিন হয়েছিল, মাত্র ৮৩ টা দাগিয়েছিলাম তারপর ও মনে হচ্ছিলো টিকবো। কিন্তু না ভাগ্যে ছিলনা, সেইবার টিকা হয়নি।

মেডিকেল এ না টিকতে পারার কারনে আমার সেই মনমানুষিকতা আবার শুরু হয়েছিল যে এত চেষ্টার এখানেই হলোনা আমার দ্বারা আর কোথাও হয়তো হবে না,আমি আর পারবো না ,হিউজ ল্যাক ওফ সেল্ফ কনফিডেন্স গ্রো করেছিলো।

ঢাবি,জাবি,চবি,বাকৃবি বাদ এ আর কোথাও আমি পরীক্ষা দেইনি, চবি তে টিকেছিলাম কিন্তু সিরিয়াল পিছে ছিলো তারপর ও আমি ভর্তি হয়নি।

মনের ইচ্ছাটা তখন ও মেডিকেল এ পড়ার জন্য ই ছিল, মনটা তখনো মানতে চাইতো না যে স্বপ্নটা একবার ভেঙে গেছে।

চারপাশের মানুষ এর কতো কথা,কতো প্রশ্ন, কতো উপদেশ তার কোনো শেষ ছিলোনা 😊 আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া সেইসময় গুলো আমাকে আর আমার পরিবারকে এতটা ধৈর্য্য দেয়ার জন্য।

অনেক ধৈর্য নিয়ে, ২০১৮ সালে ডিসেম্বর এ সেকেন্ড টাইম মেডিকেল কোচিং শুরু করি। কিন্তু এবার পার্থক্য ছিল।

আল্লাহ আমাকে আগের বার এর প্রতিটা ভুলগুলো বুঝার সুযোগ দিয়েছিলেন।

আমার লাইফ গোল নিয়ে কনফিউশন, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এর ঘাটতি ছিল,আমি নিজের ইচ্ছার কথা চিন্তা না করে আশেপাশের মানুষ কি ভাব্বে এটা বেশি চিন্তা করে নিজের আসল ইচ্ছা টা কেই বুঝতে পারিনি।

আমি ২য় বার প্রিপারেশন এর সময় আল্লাহ কে বার বার বলতাম যে আর যাইহোক আগেরবার এর এই ভুলগুলো যেন আমি শুধরে নিয়ে এবার সফল হতে পারি।

আলহামদুলিল্লাহ সেই সুযোগ আমি পেয়েছি।
১০ মাস কম সময় না, ওই সময় টা আমি শুধু কোচিং এ যেতাম আর বাসায় আসতাম…. অনেকটা সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন বলা যায়😅

যেনো আমি, আমার স্বপ্ন পুরোনের চেষ্টা, আমার পরিবার আর বাকি সব আল্লাহ ভরসা। পুরো ২০১৯ আমি আমার সাধ্যমত একদিক এ ফোকাস রেখে শুধু চেষ্টা করেছি যেহেতু আমি জানতাম এবার আমার ৫ মার্কস কাটা যাবে। 🙂

সেকেন্ড টাইম ফেজ টা মোটেও সহজ ছিলোনা অনেক আপস্ এন্ড ডাউনস্ গিয়েছে নিজের মন এর উপর দিয়ে,অনেক ডিপ্রেশন ও কাজ করতো মাঝে মধ্যে।

কিন্তু তখন পাশের রুম এ গিয়ে আব্বু আম্মু কে দেখে আসতাম আর নিজেকে বুঝাইতাম আল্লাহ যে আমাকে উনাদের মতো সাপোর্টিভ বাবা মা দিয়েছন এটা একটা ব্লেসিংস।

তারা আমার জন্য এত কষ্ট করছেন, এত কথা চুপচাপ হজম করে যাচ্ছন আমি তাদের জন্য আর একটু কষ্ট করতে পারবোনা এটা হয়না।

২০১৯ এর ১১ অক্টোবর পরীক্ষা দিলাম,এবার উল্টা পরিস্থিতি প্রশ্ন এতো সোজা যে হালকার উপর ঝাপসা প্রিপারেশন নিয়েও যারা এক্সাম দিয়েছে তারাও চান্স পেয়ে যাবে এমন অবস্থা 😅

যাইহোক এবার অনেক রিস্ক নিয়ে ৯৫ টা দাগিয়েছিলাম, হাজার কনফিউশন হলেও দাগাতে হবে যেহেতু ৫ মার্কস কেটে নিবে।

এবার আর কষ্ট ছিলোনা কারন আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম বাকিটা তো আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা রেখেছেন সেটাই আমার জন্য বেস্ট।

১৭ তারিখ রেজাল্ট দিলো ৭০.৭৫ পেয়েছিলাম ৫ কেটে ৬৬.৭৫ ওয়েটিং পজিশন 🙃 আবার সেই ধৈর্য্য পরীক্ষা আমার।

না ধৈর্য্যর ফল আল্লাহ দিয়েছন ২য় ওয়েটিং থেকে নীলফামারি মেডিকেল কলেজ এ ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম আর এখন মাইগ্রেশন এর পর নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ এর শিক্ষার্থী আমি এখন।

আমার ক্লোজফ্রেন্ডরা কঠিন সময়টা তে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে, হ্যা তারা হয়তো প্রথমবারেই দেশ এর শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু আমাকে কখোনো ছোট করেনি বরং তারা আমার সাপোর্ট সিস্টেম ছিলো,আলহামদুলিল্লাহ।

তাই সব সময় যে এমন পরিস্থিতি তে নেগেটিভ ফিডব্যাক আসবে ফ্রেন্ডস দের থেকে এমন না আসলে, পজিটিভ সাপোর্ট ও পাওয়া যায়। 🖤🖤🖤

তাই ভর্তিচ্ছু সকল ভাই বোন দের প্রতি আমার একটাই উপদেশ নিজের সাধ্যমত সর্বোচ্চ প্রিপারেশন টা নাও তবে সেটা যেনো অবশ্যই একদিকে লক্ষ্য থাকে।আর ভাগ্য যদি প্রথমে সহায় না ও হয় ভেংগে পড়ো না।

মনোবল অক্ষুণ্ণ রেখে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেই দেখো, অবশ্যই ভালো ফলাফল তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। নিজের আত্মবিশ্বাস টাকে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে বাকিটা আল্লাহর উপর সব।

আমার ওই সময় এর ভুলগুলো যদি না করতাম তাহলে এতোকিছু শিখতেও পারতাম না! তাই দিন শেষ এ আলহামদুলিল্লাহ। ”

ফারহিন মাহমুদ
নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ।
সেশন : ২০১৯-২০২০

ভর্তির আপডেট জানতে ও নিজের গল্প লিখতে যোগ দিন আমাদের এডমিশন গ্রুপে