নামে রসায়ন, পেশায় চিকিৎসাবিজ্ঞান

সামিয়া হাবিব মিথেন সায়মা হাবিব ইথেন

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস “কহেন কবি কালিদাস” এর দুই প্রধান চরিত্র ইথেন আর মিথেন। তাদের বাবা হাবীবুর রহমান একজন কেমিষ্ট্রি শিক্ষক।

আমাদের বাবাও হাবীবুর রহমান, কেমিষ্ট্রি শিক্ষক। তাই অনেকে মনে করেন বই এর সাথে মিল রেখেই আমাদের নাম রাখা হয়েছে। বইয়ের সাথে এই মিলে যাওয়ার ব্যাপারটা পুরোটাই কাকতালীয় আসলে।

বাবা যখন জানতে পারেন যমজ মেয়ে হবে তখন তার স্টুডেন্টদের কাছে কী নাম রাখা যায় তার পরামর্শ চান। বাবার স্টুডেন্টদেরই একজন ইথেন-মিথেন রাখার কথা বলেন। পরে এই নামদুটিই বাবার পছন্দ হয়।

আমাদের মামণি মারা যান ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। মামণি আর বাবার খুব ইচ্ছে ছিলো, দুজনেই যেন ডাক্তার হই। আর ছোট বেলা থেকেই সাদা এপ্রন জিনিসটা আমাদের খুব ভালো লাগে। রাস্তা দিয়ে সাদা এপ্রন পরে যারা হেঁটে যেতো,

তাদের দিকে চেয়ে থাকতাম। সত্যি ভাবিনি কখনো যে, দুজনই মেডিকেলে চান্স পাবো; সাদা এপ্রন পরার সুযোগ আমাদেরো হবে!

এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট অনুসারে ইথেনের চান্স হয় সোহরাওয়ার্দীতে, আমার ময়মনসিংহে। পরে ও মাইগ্রেশন দিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসে।

দুই বোন এক সেশনেই চান্স পেয়ে যাব ভাবিনি। রেজাল্টের দিন বাবা যে কি খুশি হয়েছিলেন! নিজেদের জীবন সার্থক মনে হচ্ছিল সেদিন।

একইরকম দেখতে হওয়ায় কলেজে প্রায়ই মজার ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে। আমাদের ফিজিও প্রফের ভাইভাতে এক্সটার্নাল রাজীব স্যার আমাদের দুইজনের দুইদিন ভাইভা নেন৷

আগেরদিন ইথেনের ভাইভা ছিল। তো পরেরদিন আমি যখন ভাইভা দিতে গেছি স্যার বললেন এ কি তুমি আবার ভাইভা দিতে এসেছ কেন। পরে স্যারকে বলি আমার বোন দিয়েছে ভাইভা, আমি না স্যার। স্যার পরে বেশ মজা পান ব্যাপারটায়।

আমাদের দুজনেরই আদর্শ – বাবা। বাবাই আমাদেরকে ছোট্টবেলা থেকে স্বপ্ন দেখা শেখাতেন –
” মানুষ কতখানি বড়?
-তার স্বপ্নের সমান বড়।”
আমাদের জীবনের সব ইন্সপিরেশন, সব মোটিভেশন বাবার কাছ থেকে পাওয়া। তিনি আমাদের জীবনের প্রথম ও প্রিয় শিক্ষক। আর শুধু শিক্ষকই নন, তিনি আমাদের প্রিয় বন্ধুও। তাকে আমাদের সব কথা বলতে পারি।

মেডিকেল লাইফ বেশ কাটছে দুজনের। ফার্স্ট ইয়ারের গণরুমের জীবনটা মিস করি খুব। বাড়ি থেকে দূরে এসেও সবার খুনসুটিতে মন খারাপের সুযোগই পেতাম না আমরা গণরুমে। অনেক মজার ছিল সময়গুলো।

প্রফের সময় অবশ্য খুব কষ্ট হয় পড়শোনার চাপে, তবে মেডিকেল ভয়ংকর কিছু না। হল লাইফ খুব মজার, বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ানো যায়, এখানে ওখানে হুটহাট ট্যুর দেওয়া যায়। আমাদের অবসরের সময়টুকু বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা, ট্যুর আর মেডিসিন ক্লাব এই দারুণ কেটে যায়।

মেডিকেলে আসলেই যে সারাদিন পড়াশোনা করতে হবে, সামাজিক জীবন বলে কিছু থাকবে না, ব্যাপারটা সেরকম না। নিয়মিত থাকাটাই আসল এখানে। আর বর্তমানটাকে উপভোগ করতে পারলে হতাশা আসে না।

ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবি না আমরা; বর্তমানেই বাঁচি। তবে,
বাবার কথা মতো দুজনে স্বপ্নের সমান বড় সার্জন হতে চাই একদিন।

সামিয়া হাবিব মিথেন
সায়মা হাবিব ইথেন
MMC, M-55
©Humans of MMC