ইউল্যাবের ২ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী গ্রেফতারের পর জামিন পেয়েছেন

শনিবার দুপুরের দিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে পুলিশ দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। ছবি: দেশ রূপান্তর
শনিবার দুপুরের দিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে পুলিশ দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। ছবি: দেশ রূপান্তর

সকালে গ্রেপ্তার, বিকেলেই জামিন পেলেন ইউল্যাবের ২ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা মামলায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাজধানীর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজমের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাদাত রুহুল ও রায়হান আতিক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দুলাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করে।

প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগের চার দফা দাবির পাশাপাশি দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে উল্টো মামলা করে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মোহাম্মদপুরের ইউল্যাব ক্যাম্পাস এলাকা থেকে ওই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে।

ইউল্যাবের নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার তৌফিক আজিজ বাদী হয়ে মামলা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ওয়াজির এ এফ আহমেদ জানান, গ্রেপ্তার দুই জনসহ আরও কয়েকজন তাদের নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের এসব থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু, তারা আমাদের কথা শোনেনি।’

‘বৃহস্পতিবার তারা আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে তালা লাগিয়ে দেয় এবং রাত দশটা পর্যন্ত সেখানে ঢুকতে বা বের হতে বাধা দেয়,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সেখানে শিক্ষার্থী কম ছিল। কিছু বহিরাগত দেখেছি। গতকাল তারা সেখানে ভাঙচুর চালায় এবং আমাদের এক কর্মীকে আহত করে।’

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল রাতে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমি জানি না। দুই শিক্ষার্থীকে আগে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতদের জন্য প্রক্টর হিসেবে আমি কিছুই করতে পারি না।’

Ulab
‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ অভিযোগে ইউল্যাবের ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

এর আগে, গত ১৫ নভেম্বর ওই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি, কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ‘মিথ্যা’ তথ্য প্রচার করার অভিযোগ ছিল।

তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় ফি ৫০ শতাংশ মওকুফের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

তবে সকালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিকেলেই জামিন পেয়েছেন তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) দুলাল হোসেন আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তিনি জানান

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার তৌফিক আজিজ বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অক্টোবর মাস থেকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছেন তারা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা হয়নি।

পরবর্তীতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা জারি করা হলেও ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ করেনি।

তারা বলেন, এসব কারণে বিশ্ববিদালয়ের ৫০ ভাগ টিউশন ফি কমানোসহ চার দফা দাবিতে এই আন্দোলন চলছিল।

অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য সকল ধরনের প্রণোদনাসহ ডিজিটাল ডিভাইস ও নেট সংযোগ বিল মওকুফ, অ্যাক্টিভিটিজ ফি মওকুফ ও রেজিস্ট্রেশন শিডিউল শিক্ষার্থী বান্ধব করা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব দাবি পূরণ না করে কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের নোটিশ জারি করে। তারপর থেকে আন্দোলনকারীরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ অন্যান্য দাবিতে অনড় থাকেন।

তারা জানান, সর্বশেষ গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে পুলিশ ওই দুজনকে ধরে নিয়ে যায়।
আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী আরও অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ নানাভাবে আন্দোলনকারীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

দাবি না মেনে উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা পর্যন্ত দায়ের করেছে।

প্রশাসনের ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিনের আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আগের সংবাদঃ ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ দায়ে ইউল্যাবের ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার