ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ঘ ও চ ইউনিট বাতিলের সুপারিশ ডিন’স কমিটির

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ-ইউনিট ও চারুকলা অনুষদভুক্ত চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমিটি৷

পাঁচটি ইউনিটের পরিবর্তে তিনটি ইউনিটের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের।

তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আগের নিয়মেই পাঁচটি ইউনিটের আওতায় পরীক্ষা নেওয়া হবে।

আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমিটির এক সভায় উপাচার্য ঘ ও চ ইউনিট বন্ধের প্রস্তাব তোলেন৷

উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থীরা যে তিন ধারায় (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) পড়াশোনা করেন, তার আলোকেই ভর্তি পরীক্ষার তিনটি ইউনিট করতে চান উপাচার্য৷ সভায় এটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়৷ সেখানে বেশির ভাগ ডিন প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন৷

তবে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে৷

তবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম এই সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন না৷

তিনি জানান, ‘পরীক্ষা কমানোর ভাবনা থেকে সভায় উপাচার্য ঘ-ইউনিট ইউনিট বন্ধ করার প্রস্তাব তোলেন৷ তিনি বলেন যে, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডুপ্লিকেশন এড়ানো জন্য এবং বোঝা কমানোর জন্য তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা নেব। বর্তমান যে ইউনিটগুলো আছে, সেগুলো তিনটা ইউনিটে বিন্যাস করব। ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট বেশি হয়ে গেছে৷

আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ ও কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন উপাচার্যের প্রস্তাবে সমর্থন দেন৷ কিন্তু এটি সমর্থন-অসমর্থনের কোনো বিষয় নয়৷

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বললেন, ‘সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটা স্বকীয়তা আছে৷ এই অনুষদের ১৬টি বিভাগ থেকে সরকারি ও বেসরকারি নানা সেক্টরে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন, ভালো করছেন৷ তিন শতাধিক শিক্ষক এই অনুষদে পাঠদান করেন৷

শিক্ষকেরা নিজস্ব পরীক্ষা চান৷ আমার বক্তব্য, আমাদের অনুষদের জন্য (সামাজিক বিজ্ঞান) স্বতন্ত্র ইউনিট হওয়া উচিত৷ তা না পারলে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ নামে ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট করতে হবে৷ একাডেমিক কাউন্সিলে অবশ্যই এটি নিয়ে আলোচনা হবে৷’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানান, ‘উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা যে তিনটা ধারায় পড়াশোনা করেন, অর্থাৎ- বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ; সেই তিন ধারাকে বিবেচনায় রেখে তিনটি ইউনিটে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ পাঁচ ইউনিটের পরিবর্তে তিনটি ইউনিটের আওতায় পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে৷ ইউনিটের যেকোনো নামকরণ হতেই পারে৷ এতে যেটা হবে, পরীক্ষা নেওয়ার চাপ কমে আসবে৷

তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২১) আগের নিয়মেই পরীক্ষা হবে৷’ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের আপত্তির বিষয়ে উপাচার্যের মন্তব্য, ‘এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিপর্যায়ের কোনো ব্যাপার নয়৷’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ মনে করেন, ঘ ও চ ইউনিট বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে-চিন্তে৷ চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানালেন তিনি৷

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ-ইউনিটে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা- এই তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই আবেদন করতে পারেন৷ সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ এবং বিজ্ঞানবিষয়ক কয়েকটি বিষয়ে এই ইউনিট থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক ইউনিটে, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের খ ইউনিটে এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের গ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হত।

উচ্চ মাধ্যমিকের বিভাগ পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতাপূরণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারেন।

অপরদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের যারা চারুকলা ভর্তি হতে চান, তাদেরকে চ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হত।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবছর ( ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষার জন্য সবাইকে ঢাকায় না এনে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পাশাপাশি এবার পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতদিন মোট ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হত। সেখানে ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি ও এইচসির জিপিএর ভিত্তিতে ৮০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হত।

এবার মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর জন্য থাকছে ২০ নম্বর, বাকি ৮০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তার মধ্যে আবার ৩০ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে।