২য় শ্রেণীর ডিগ্রী নিয়েই বুয়েটের শিক্ষক!

Buet

শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর সবগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির ডিগ্রি নিয়েই ১৭ বছর ধরে শিক্ষককতা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

শিক্ষক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার
শিক্ষক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুয়েটের হাউসকিপার কিংবা ল্যাব এটেনডেন্ট হতেও মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচএসসি) প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে হয়ে। শিক্ষার্থী ভর্তির সময়েও রেজাল্টের বিষয়ে আপসহীন প্রতিষ্ঠানটি। দেশের সেরাদের সেরা শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান ‍বুয়েটে।

চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর কিউএস টপ ইউনিভার্সিটিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান লাভ করে বুয়েট। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটেগরিতে এ তালিকা করা হয়।

এমন একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে হলে, শিক্ষার্থীদেরকে সেরাটা দিতে হলে, সেরাদেরকেই বেছে নেবার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যদিও এগুলোর কোনোটাতেই যোগ্যতা অর্জন করেন নি অধ্যাপক মাহবুব তালুকদার। এসএসসি ও এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগের পাশাপাশি অনার্স ও মাস্টার্সেও দ্বিতীয় বিভাগ তার। এমন একাডেমিক রেজাল্ট নিয়েও দেশের সর্বোচ্চ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক তিনি।

বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক চাকরি করছেন ১৭ বছর ধরে। যদিও এখানে শিক্ষক হতে কেবল প্রথম শ্রেণীর যথেষ্ট নয়, বরং হতে হয় সেরাদের সেরা। তাহলে কীভাবে তিনি এতোগুলো অযোগ্যতার গণ্ডি মাড়িয়ে বুয়েটের শিক্ষক হলেন সে প্রশ্ন সবার মনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কথা বলেও জানা যায়নি তার নিয়োগের প্রক্রিয়া।

জানতে চাইলে এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, তার কাগজপত্র ভ্যারিফাই করেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তার প্রমোশনও হয়েছে সে অনুযায়ী। যদি কোন ব্যত্যয় ঘটে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আছে— এটা মূলত তাদের দায়িত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদারের প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব পর্যায়ে রয়েছে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতি। এ নিয়ে ২০১৫ সালে উপাচার্যের নিকট একটি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষকরা। এ প্রতিবাদের পরেও গড়িয়েছে পাঁচ বছর।

বুয়েট সূত্র বলছে, অধ্যাপক মাহবুব তালুকদারের ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি ওপেন-সিক্রেট। কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ফোরকান উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বললেন, এ নিয়ে কথা বলতে হলে উপাচার্যের কাছে যান। পরে উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, আমার কিছু বলার নেই। যা বলার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলবে। আমি কি আমাকে নিয়োগ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিছু বলতে হলে তাদের সাথে কথা বলেন।