বাংলাদেশ ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারে ১ম কেন?

ক্রনি ক্যাপিটালিজমকে বাংলায় বলা যায় ‘স্বজনতোষী পুঁজিবাদ’। দ্য ইকোনমিস্ট যেভাবে এর সংজ্ঞা দিয়েছিল, সেটা আগে বলি। তারা বলেছে, বিশ্বের অনেক শীর্ষ ধনী প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন স্রেফ ‘রেন্ট সিকিং’ করে।

‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম ইনডেক্স’।

এর বাংলা হচ্ছে অনুপার্জিত আয়। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলা যায় সাধারণ মানুষ কোনো পণ্য কিনতে বা সেবা পেতে যা পরিশোধ করে, আর যা করা উচিত ছিল—এই দুইয়ের পার্থক্যই হলো ‘ইকোনমিক রেন্ট’।

ব্যাখ্যাটা এ রকম—প্রতিটি দেশে এমন অনেক খাত আছে, যেখানে ব্যবসা করতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগে অথবা ব্যবসাটি একচেটিয়া ধরনের, যেখানে অন্য কেউ ঢুকতে পারে না বা ঢুকতে দেওয়া হয় না।

এসব ব্যবসা পেতে হলে সরকারের সরাসরি লাইসেন্স বা পৃষ্ঠপোষকতা লাগে, ঘুষ দিতে হয়, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে হয়, আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করতে হয় বা জমি দখল করতে হয়।

এসব ব্যবসায়ী তাদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে, আর সাধারণ মানুষকে বেশি দামে তা কিনতে হয়। দ্য ইকোনমিস্ট যেমনটা বলেছে, এরা কেকটা বড় করতে পারে না, কিন্তু কেকের সবচেয়ে বড় টুকরোটা দখল করে ফেলে। ফলে অন্যরা কম পায়।

ক্রনি ক্যাপিটালিজম সৃষ্টি করে এ রকম ১০ ধরনের ব্যবসার একটি তালিকা দিয়েছিল দ্য ইকোনমিস্ট। যেমন: ক্যাসিনো; কয়লা, পামতেল ও কাঠের ব্যবসা; প্রতিরক্ষার কেনাকাটা; ব্যাংকিং; অবকাঠামো ও পাইপলাইন তৈরি; সমুদ্র ও বিমানবন্দর, রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ, ইস্পাত, অন্যান্য ধাতব, খনন ও পণ্য এবং সেবা ও টেলিফোন খাত।

ম্যাগাজিনটি বলেছে, রাশিয়া ও ব্রাজিলে ক্রনি ক্যাপিটালিজম তৈরি হয়েছে মূলত সরকারের মালিকানা থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে, সরকার ও ব্যবসায়ীদের নেক্সাস থেকে।

মেক্সিকোর শীর্ষ ধনী টেলিফোন সেবার একচেটিয়া ব্যবসা করেন। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, সময়টা ক্রনি ক্যাপিটালিজমের স্বর্ণযুগ, আর আগের ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী ক্রনি ক্যাপিটালের পরিমাণ ৩৮৫ গুণ বেড়ে হয়েছে দুই ট্রিলিয়ন (এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশের তথ্য প্রথম পাওয়া যায় ২০১৮ সালে, ওয়েলথ এক্স নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে ৭৫টি দেশের মধ্যে –

পয়লা নম্বরেই বাংলাদেশ-২০১৮

২০১২ সাল থেকে পরের পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। ওয়েলথ এক্স মন্তব্য করেছিল, ‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়। এ মর্যাদা বাংলাদেশের।’

২০২০ সালের মার্চে ওয়েলথ এক্স আবার একই বিষয়ে নিয়ে আরেকটি প্রকাশ করেছে। এবারের তালিকাতেও –

 বাংলাদেশ সবার ওপরে-২০২০

সেখানে বলা আছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে দেশে ধনকুবেরের (৫০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের অধিকারী) সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। বাংলাদেশের পরেই ভিয়েতনামের অবস্থান, সেখানে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।