কথাসাহিত্যিক মু. জাফর ইকবালের জন্মদিন আজ

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

দেশের নন্দিত কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের, আজ ২৩ ডিসেম্বর প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ও গবেষকের জন্মদিন।

কিশোর সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার ভক্তদের মধ্যে চলছে নানা উদ্দীপনা ও আয়োজন। ফেসবুক টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সবাই।

১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাফর ইকবালের জন্ম । তার পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন।

বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল।

পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়ায় জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। এটিকেই তিনি তাঁর সহজ ভাষায় লিখতে পারার গুণের কারণ বলে মনে করেন।

জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

১৯৭৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। তাঁর বিষয় ছিল – Parity violation in Hydrogen Atom। সেখানে পিএইচডি করার পর বিখ্যাত ক্যালটেক থেকে তাঁর ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

ড. জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে।

১৯৭৫ সালে অনার্স-এ দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৮২ তে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে সাফল্যের সাথে ডক্টরেটোত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন।

ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম সায়েন্স-ফিকশন গল্প কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। এর উত্তর হিসেবে তিনি একই ধরণের বেশ কয়েকটি বিচিত্রার পরপর কয়েকটি সংখ্যায় লিখে পাঠান।

ব্যক্তিগত জীবন তিনি বেশ কিছু পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৪), শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫), কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), খালেদা চৌধুরী সাহিত্য পদক (বাংলা ১৪১০), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদক (২০০৪), মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক (২০০৫), মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক (২০০৫), আমেরিকা এল্যাইমনি এ্যসোসিয়েশন পদক (২০০৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালাইমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক (২০০৫)।

তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হচ্ছে- উপন্যাস : আকাশ বাড়িয়ে দাও (১৯৮৭), বিবর্ণ তুষার (১৯৯৩), দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর (১৯৯৪), কাচসমুদ্র(১৯৯৯), সবুজ ভেলভেট (২০০৩), ক্যাম্প (২০০৪), মহব্বত আলীর একদিন (২০০৬) ছোট গল্প : একজন দুর্বল মানুষ (১৯৯২), ক্যাম্প, ছেলেমানুষী (১৯৯৩), নুরূল ও তার নোটবই (১৯৯৬), মধ্যরাত্রিতে তিন দূর্ভাগা তরুণ (২০০৪)।