লিও তলস্তয়ের উপন্যাসে বাস্তবিকতা: বিশ্বসাহিত্য ভাষণ ৪

তলস্তয় উপন্যাসটিতে, রিয়ালিজমের চর্চা এমন শৈল্পিকভাবে করেছেন যে এটিকে সাধারণ কোনো ফিকশনের কাতারে ফেলা সম্ভব ছিলো না। এটিতে কিছু চরিত্র তাঁর নিজের আদলে, এবং কিছু চরিত্র তাঁর আত্মীয় স্বজনের আদলে এঁকেছিলেন। ঐতিহাসিক চরিত্র, এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকেও নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন।

আবার যুদ্ধক্ষেত্রের বর্ণনাগুলো এমনভাবে দিয়েছেন যে, এগুলোতে অতিরঞ্জন বা কাল্পনিক নাটকীয়তা ছিলো, এমন অভিযোগ কেউ আনতে পারবে না (এর কারণ সম্ভবত ক্রিমিয়া যুদ্ধে তলস্তয়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা)। ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর যুদ্ধবর্ণনা পড়ে হেমিংওয়ে খুব অভিভূত হয়েছিলেন, এবং তিনি তাঁর একটি লেখায় তলস্তয়কে শ্রেষ্ট যুদ্ধসাহিত্যিক বলে উল্লেখ করেছিলেন। থমাস মানও একইরকম মন্তব্য করেছিলেন। মানের মতে, ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-ই মানুষের লেখা শ্রেষ্ঠ যুদ্ধোপন্যাস।

‘ব্যাটল অব অস্টারলিজ’, যেটিকে অনেকে তিন সম্রাটের যুদ্ধ ডাকেন, এটির ঘটনাপ্রবাহকে তলস্তয় এমনভাবে তুলে ধরেছেন— যেন তিনি ১৮০৫ সালের ওই যুদ্ধে নিজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখান থেকে আমি তলস্তয়ের ধৈর্য্যের পরিচয় পাই।

দস্তয়েভস্কির মতো তাড়াহুড়ো করে লিখলে, তিনি অস্টারলিজের এমন চিত্র আঁকতে পারতেন না। অবশ্য তলস্তয় খুব খুঁতখুঁতেও ছিলেন। কোনো লেখা তাঁর মনমতো না হওয়া পর্যন্ত, এটির সম্পাদনা, পুনঃসম্পাদনা তিনি চালিয়ে যেতেন।

নাতাশা চরিত্রটির কথা একটু আলোচনা করতে চাই। চরিত্রটি রুস্তভ পরিবারের (‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর পাঁচ পরিবারের এক পরিবার)। পুরো নাম নাতালিয়া নাতাশা ইলিনিচনা রুস্তোভা। চরিত্রটি ইতিহাস-নির্ভর নয়, ফিকশোনাল। তলস্তয় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কী ধরণের নারী পছন্দ করতেন, তার একটি নমুনা হতে পারে এই নাতাশা।

উপন্যাসটিতে নাতাশার আগমন ঘটে তেরো বছর বয়সে, আর উপন্য্যাসটি যখন শেষ হয় তখন তার বয়স হয়েছিলো আটাশ। অভিনেত্রী অদ্রে হপবার্ন, কিং ভিদোরের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ সিনেমায়, এই চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছিলেন। তবে তলস্তয়, নাতাশাকে নির্মাণে কিছু নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে হয়েছে।

তার বারবার প্রেমে পড়া, প্রিন্স কোরাতিনের সাথে ভেগে যাওয়ার চেষ্টা, ভেগে যেতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা, সুবোধ প্রেমিকার মতো প্রিন্স আদ্রেইর সেবাযত্ন করা, এবং আদ্রেইর মৃত্যুর পর পিয়েরের প্রেমে পড়া, পিয়েরেকে বিয়ে করে চার সন্তানের জননী হওয়া, এসব ঘটনার কনস্ট্রাকশনে নাটকীয়তা রয়েছে, যদিও উপন্যাসটি লম্বা হওয়ার কারণে এ নাটকীয়তা বুঝা যায় না।

তবে জীবন যে কারও জন্য থেমে থাকে না, এবং কারও প্রেমে বুঁদ হয়ে যে জীবনের গতি থামিয়ে দিতে হয় না, তা তলস্তয়, নাতাশার মাধ্যমে খুব শৈল্পিকভাবে আমাদের বলেছেন। বাঙালি তরুণেরা নিশ্চয়ই নাতাশাকে খুব একটা পছন্দ করবে না।

তাদের প্রয়োজন শাবানা, অথবা এমন কেউ, যাকে রোজ জুতোপেটা করা যাবে, কিন্তু ছেড়ে যাবে না।

তবে তলস্তয় নাতাশাকে, পিয়েরের সাথে বিয়ের পর যেভাবে চিত্রিত করেছেন, সেটিকে আমার দিনা মরিসের মতো মনে হয়েছে। দিনা মরিস হলো জর্জ এলিয়টের ‘এডাম বিড’ উপন্যাসের একটি চরিত্র।

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ তলস্তয়, তাঁর সাইকোলোজিক্যাল মুন্সিয়ানাও প্রদর্শন করেছেন। গুস্তাব ফ্লবেয়ার, তুর্গেনেভকে লেখা এক চিঠিতে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করেছেন। তলস্তয় তাঁর চরিত্রগুলোর, মানসিক অবস্থার যে সাইকোলোজিক্যাল বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন, তা ঈর্ষণীয়।

কিন্তু তলস্তয় যে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-কে উপন্যাসের বদলে মহাকাব্য বলতে চেয়েছিলেন, সে-ব্যাপারটি হয়তো অনেকে উপেক্ষা করে গেছেন। তবে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। অনেকেই এটিকে রাশিয়ার ইলিয়াড হিশেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।

গঞ্চারোভ তো সরাসরিই এটিকে ইলিয়াড বলেছিলেন। পিওতোর গানজেনকে লেখা এক চিঠিতে এর উল্লেখ আছে। গানজেনকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আপনি ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ ড্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করুন। অবশ্য গানজেন তাঁর কথা আমলে নেন নি। তিনি ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর বদলে অনুবাদ করেছিলেন ‘আন্না কারিনিনা’।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ ঘটনা ও চরিত্রের যে বিপুল বিস্তৃতি, এবং জটিলতা রয়েছে, তা আমার কাছে ইলিয়াড ও মহাভারতের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ইলিয়াড ও মহাভারতের ভাষা অনেকটা লাঠির মতো, কিন্তু ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর ভাষা চাদরের মতো।

এটির বর্ণনাভঙ্গী, হৃদয়কে খুব কোমলভাবে আঘাত করে। এটি পড়লে হয়তো ইট-পাটকেলের স্বাদ পাওয়া যাবে না, কিন্তু এটি যে মনকে জলের মতো শান্ত করে দেয় তা অস্বীকার করা যাবে না। এজন্য এটিকে আমি বলবো আধুনিক মহাকাব্য।

একটি নির্দিষ্ট সময়ের রাশিয়াকে, এটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ভিডিও করেছে। অন্তত এর মহাকাব্যিক বৈশিষ্ট্যের জন্য, ১৯০১ সালের নোবেল পুরষ্কারটি, সুলি পোদোমের মতো ফালতু কবির চেয়ে তলস্তয়ের অধিক প্রাপ্য ছিলো বলে মনে করি।

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এ প্রচুর ফরাসি ভাষার ডায়ালগ রয়েছে, যা নিয়ে অনেকের খেদ আমার চোখে পড়েছে। এ খেদ অমূলক।

কারণ যে-সকল স্থানে তলস্তয় ফরাসি ভাষা ব্যবহার করেছেন, সে-সকল স্থানে রুশ ভাষা ওই সময়ে বেমানান ছিলো। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, তলস্তয় যে-সময়ের গল্প করেছেন, সে-সময়ে রুশ অভিজাত পরিবারগুলো ফরাসি ভাষা খুব ব্যবহার করতো।

বলা যায় রুশ নয়, ফরাসিই ছিলো তাদের মাতৃভাষা। এ প্রসঙ্গে জুলি কারাজিনার কথা মনে পড়ছে। এ চরিত্রটি, নিজে রাশিয়ান হওয়া সত্ত্বেও রুশ ভাষা শেখার জন্য কোচিংয়ের আশ্রয় নিয়েছিলো।

আমার মনে হয় ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ নিয়ে আমরা আর আলোচনা না করি। আমাদের উচিত হবে এখন, তলস্তয়ের আরেক বিখ্যাত উপন্যাস ‘আন্না কারিনিনা’-র দিকে নজর দেয়া।

‘আন্না কারিনিনা’ বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালে। এর আগে এটি কিস্তি আকারে বেরিয়েছিলো ‘দি রাশিয়ান মেসেঞ্জার’ নামক একটি পত্রিকায়। তলস্তয় ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-কে উপন্যাস হিশেবে দাবি না করলেও, ‘আন্না কারিনিনা’-কে তিনি দাবি করেছিলেন পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হিশেবে।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র আন্না কারিনিনা নামের এক নারী। তার পুরো নাম আন্না আরকায়দিভনা কারিনিনা। বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসটির প্রভাব, আমার ধারণা, বিশ্বের অন্য যেকোনো উপন্যাসের চেয়ে বেশি। উপন্যাসটি আমাদের এ অঞ্চলে প্রেম ও পরকীয়ার ঢল বইয়ে দিয়েছে।

এটি পড়েই সম্ভবত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিমল মিত্র, সমরেশ মজুমদার, মানিক বন্দোপাধ্যায়, তারাসঙ্কর, এঁরা তাঁদের উপন্যাসে একের পর এক আন্না কারিনিনার সূচনা করেছেন।

আন্নার স্বামীর নাম ছিলো কারিনিন। পেশায় ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু স্বামী-সন্তান থাকার পরও আন্না প্রেমে জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রন্সকি নামের এক সৈনিকের সাথে।

এই সরল পরকিয়ার প্লট, আমার ধারণা, তলস্তয় ধার করেছিলেন ফ্লবেয়ারের ‘মাদাম বোভারি’ উপন্যাস থেকে।

আমাদের বিমল মিত্রের ‘স্ত্রী’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’, তারাশঙ্করের ‘হাঁসুলীবাকের উপকথা’, শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’, এবং হুমায়ুন আহমেদের ‘ফেরা’ উপন্যাসেও এ ধরণের পরকিয়ার প্লট রয়েছে। অবশ্য এ মাত্র কয়েকটি নাম। এর বাহিরেও নাম আছে শতো শতো।

আমাদের রবীন্দ্রনাথও, তাঁর ‘চোখের বালি’ এবং ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে পরকীয়াকে উপজীব্য করেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ একটু পাক পবিত্রতায় বিশ্বাসী ছিলেন। এজন্য মহেন্দ্র-বিনোদিনী, বা সন্দ্বীপ-বিমলার পরকীয়াকে রবীন্দ্রনাথ এঁকেছিলেন অনেকটা মশারির ভেতরে মশার চিৎকারের মতো।

ভালো করে দেখা যায় না, কিন্তু কিছু একটা যে হচ্ছে, তা টের পাওয়া যায়। একই কৌশল মানিক বন্দোপাধ্যায়ও নিয়েছিলেন, যদিও রবীন্দ্রনাথের মতো করে পেরে উঠেন নি।

হুমায়ূন আহমেদ আবার মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ভক্ত ছিলেন, এজন্য মানিক বাবুর মতো তিনিও সীমিত আকারে এ কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর ‘ফেরা’ পড়লে মনে হয়, মানিক বাবু তাঁর ঘাড়ে রামদা নিয়ে বসে আছেন।

এখানে আরও একটি ঘটনা আমার মনে পড়ছে। বঙ্কিমের কৃষ্ণকান্তের উইল প্রকাশিত হয়েছিলো ১৮৭৮ সালে, যে-সালে তলস্তয়ের ‘আন্না কারিনিনা’ বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিলো।

কিন্তু আন্না কারিনিনা কিস্তি আকারে, প্রথম বের হওয়া শুরু হয়েছিলো ১৮৭৩ সালে, এবং এটি চলেছিলো ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত। তাঁর কৃষ্ণকান্তের উইলের গোবিন্দলাল-রোহিণীর পরকীয়া, অনেকটা আন্না কারিনিনা ঘরানার পরকীয়া।

তবে বঙ্কিম সম্ভবত, ‘আন্না কারিনিনা’ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার আগে ওয়াল্টার স্কট থেকে নিয়েছিলেন। কারণ তাঁর বিষবৃক্ষ উপন্যাসও ছিলো একই ধরণের, কিন্তু বিষবৃক্ষ প্রকাশিত হয়েছিলো ‘আন্না কারিনিনা’ বের হওয়ার এক বছর আগে।

বঙ্কিম তলস্তয়কে অনুসরণ করেছিলেন কি না জানি না, তবে বঙ্কিমকে যারা অনুসরণ করেছেন, তাঁরা সকলেই তলস্তয়কে অনুসরণ করেছেন, এটা বলতে পারি।

আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎ, এবং আরও কয়েকজন ছাড়া, যারাই বিশ্বসাহিত্য থেকে ধার করতে গিয়েছেন, তারাই হাতির বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে বাতারির বাচ্চা প্রসব করেছেন।

‘আন্না কারিনিনা’য়, তলস্তয় যেখানে প্রেম-পরকীয়ার সমান্তরালে, চরিত্রগুলোর রাজনীতি, সামাজিক সংকট, ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট, এবং মানসিক উদ্বেগকে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন, সেখানে আমাদের বিমল-সুনীল-তারাশঙ্করেরা শুধু শরীর ও মনকেন্দ্রিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে গেছেন।

কেউ কেউ অবশ্য, যেমন মানিক বাবু, কিছু দারিদ্র্য আর কিছু টানাটানিকে, আধা বানোয়াট আধা বাস্তবিক উপায়ে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তা না হয়েছে ভর্তা না হয়েছে তরকারি। আমি ‘পদ্মানদীর মাঝি’-কে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর সিলেবাস থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করছি (যদি এখনও তা থেকে থাকে)।

কিন্তু তার আগে ‘পদ্মানদীর মাঝি’-র বিকল্প কী তা আমাদের জানাতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে যে, কাওরানবাজার হক বা মিলনের কোনো ফালতু বিষ্ঠাকে মানিকের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এটি অস্বাভাবিক নয়। মানিক তাদের চেয়ে অনেক বড় ঔপন্যাসিক। কিন্তু মানিকের চেয়েও বহু উৎকৃষ্ট ঔপন্যাসিক বাংলা ভাষায় আছেন। আমি চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সেগুলোই পড়ুক। আর এক উপন্যাস বছরের পর বছর পড়ানোর কোনো মানে হয় না।

এখানে বৈচিত্র আনতে হবে। প্রতি এক বা দুই বছর পর পর, সিলেবাসে নতুন উপন্যাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এবং পুরাতন উপন্যাসকে ছুটি দিতে হবে।

* (একজন পাঠক আমাকে জানিয়েছেন যে, ‘পদ্মানদীর মাঝি’ না কি উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাস থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, এবং তার বদলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালু। এটি হয়ে থাকলে, তা হবে আমার আশংকারই বাস্তবায়ন। লালসালু বড়জোর একটি গল্প হতে পারে, এটি কখনোই উপন্যাস নয়। ওয়ালিউল্লাহ ও তাঁর ভক্তরা এটিকে উপন্যাস দাবি করলেই হবে না। লালসালুর চেয়ে মানিকের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ অনেক উৎকৃষ্ট ছিলো।)

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর মতো আন্না কারিনিনাও অনেকটা ইতিহাস-নির্ভর। তবে এখানে ইতিহাসের যে-রূপ প্রকাশ পেয়েছে, সেটি অনেকটা ওই সময়ের বর্তমানকে ধারণের চেষ্টা। ঠিক ইতিহাস নয়, আবার ইতিহাসের চেয়ে কমও নয়। উপন্যাসটিতে সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের লিবারেল সংস্কারের খুব ভালো আঁচ পাওয়া যায়।

রাশিয়ায় যে তখন দ্রুতগতিতে শিল্প, ব্যাংক, রেলখাত, যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাধীন গণমাধ্যম, নারী অধিকার, ও আরও অনেক কিছুর বিকাশ ঘটে চলছিলো, তা উপন্যাসটির বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনার মাধ্যমে, তলস্তয় আমাদের জানিয়েছেন। গ্রাম এবং নগর জীবনের একটি দ্বন্দ্বও এ উপন্যাসে প্রকাশ পেয়েছে।

আমি লক্ষ করেছি, তলস্তয়ের অধিকাংশ চরিত্রই মস্কো এবং পিটার্সবুর্গ ভিত্তিক। কিন্তু এ চরিত্রগুলোর বর্ণনায় শহরের ছবি খুব একটা পাওয়া যায় না। এর কারণ সম্ভবত, তলস্তয়ের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। তলস্তয় বিশ্বাস করতেন, শহর খুব একঘেয়ে, একে বর্ণনা করার কিছু নেই। এর উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম সব সমান। শুধু ভবন আর ভবন।

— মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
(বাকি অংশ আগামী পর্বে। এর আগের পর্বগুলোর লিংক দেয়া হলো)