নগদের বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণঃ কতটুকু কনজ্যুমারবান্ধব হলো?

গেল শুক্রবার, ৪ ঠা ফেব্রুয়ারীতে দেশের Mobile Financial Service (MFS) সেক্টরের নবীন কিন্তু অন্যতম দাপুটে ব্র্যান্ড ‘নগদ’ তার নতুন ক্যাম্পেইন launch করল । একজন মার্কেটিং প্রফেশনাল হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির উল্লেখযোগ্য কাজ এবং আলোচনা থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখি এবং নিজেও আলোচনা করি । তারই অংশ হিসেবে এবার কীবোর্ডে হাত দেয়া ।

সবচেয়ে প্রথমে যেটি বলব একসাথে একই সময়ে এতগুলো ক্রিয়েটিভ মাঠে নামাবার উদ্যোগটা এদেশে একদম প্রথমবারের মত হলো । অন্য কোনো ব্র্যান্ড কখনো এভাবে এতগুলো ক্রিয়েটিভ একসাথে প্রচার শুরু করেছে বলে অন্ত:ত আমার জানা নেই । সাথে কাস্টিংগুলোও মারাত্নক ।

এতজন জনপ্রিয় অভিনেতা এবং Influencers দের একসাথে আনাটাও একটা বড় চমক সন্দেহ নেই । এই বিশাল এবং সম্পূর্ণ নতুন ধরণের একটি চমকের জন্য নগদের মার্কেটিং টিম প্রথমেই একটা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য ।

যদিও কতগুলো এ্যাড বানানো হলো কিংবা কাকে কাকে তাতে অভিনয় করানো গেল তা কিন্তু কখনই কমার্সিয়ালের মূল উদ্দেশ্য নয় । মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে ব্যবসায় কি ইম্প্যাক্ট পড়ল ?

একই সাথে এতগুলো এ্যাড নগদের মার্কেটিং বাজেটের ঠিক এফিসিয়েন্ট ব্যবহার কিনা সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । অভিজ্ঞতা থেকে জানি যেখানে একটা গল্পই কোটি কোটি টার্গেট কনজ্যুমারদের মাথায় ঢুকাতে এবং মনে রাখাতে বছর কেটে যায়, সেখানে এতগুলো গল্প একসাথে কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছৈবে এবং মাথায় কাজ করবে আমি ঠিক নিশ্চিত নই ।

যদিও সবগুলো গল্পেই মূল Unique Selling Proposition বা USP হিসেবে এ্যাকাউন্ট খোলার সহজবোধ্যতার কথা বলা হয়েছে, যেটি হয়ত মেসেজখানার Penetration -এ সাহায্য করবে । তবে সাথে সেকেন্ডারী USP হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন ফিচার আনা হয়েছে, যেটি মাল্টিপল মেসেজ তৈরী করছে এবং এখানেই আমার মনে হয় Efficiency নষ্ট হয়ে যাবার ভয়টা থাকবে ।

আরেকটি ব্যপার হলো – এতগুলো এ্যাড কিভাবে টার্গেটিং করবে ? বিশেষত: যেখানে অনেকগুলোরই (কিংবা প্রায় সবগুলোরই) Target group এক ! তারমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একই লোকের টাইমলাইন পাবার জন্য একই ব্র্যান্ডের একই বক্তব্যের কিন্তু একাধিক এ্যাড নিজেদের ভেতরেই প্রতিযোগীতা করবে ।

মানে বিডিং খরচ বেড়ে যাবে । সেটিও হয়ত সমস্যা নয়, যদি মূল বক্তব্য বা USP গুলো আলাদা হতো । কিন্তু এই এ্যাড-সিরিজে ঘটনা তাও নয় । সবগুলোই একই USP নিয়ে বানানো ।

তারমানে হচ্ছে আপনি একই কথা বলার জন্য একই সময়ে একাধিক গল্প একই লোককে বলছেন এবং প্রতিটি গল্প নিজেকে বলার সময়টুকু দখল করার জন্য নিজেদের ভেতরেই প্রতিযোগীতা করেছে ! এটি আমার কাছে ঠিক এফিসিয়েন্ট মনে হচ্ছে না ।

তবে ‘নগদ’ এর নিশ্চয়ই প্রচুর এবং প্রকান্ড একখানা মার্কেটিং বাজেট রয়েছে, আর থাকাটাই স্বাভাবিক – একে তো MFS তার উপর আবার সরকারী প্রতিষ্ঠানের অংশ, তাই মার্কেটিং বাজেট নিয়ে হয়ত তাঁদের টেনশনটা আমাদের মত সম্পূর্ণ প্রাইভেট বিজনেস প্রতিষ্ঠানের চাইতে অনেক কম । তাই এই আপাত: Inefficient স্ট্রাটেজীতে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই ।

এবার আসি এ্যাড এনালাইসিসে:

এ্যাডগুলো দেখেই অবজেকটিভটা পরিষ্কার বোঝা যায় – বিকাশের কাস্টমারকে নগদে সুইচ করানো । এই জায়গাটাতে নগদ টিম একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে – একদম ঝকঝকে ক্লীয়ারকাট অবজেকটিভ নিয়ে ক্যাম্পেইনে নামার জন্য, যেটি আমাদের দেশের অনেক ক্যাম্পেইনেই থাকে না ।

চমৎকার কাস্টিং এর ব্যপারে আগেই বলেছি, আর বলার কিছু নেই । এ্যাডেগুলো Duration টা স্ট্যান্ডার্ড, তবে আমার মনে হয়ছে চাইলে আরও ৫-৮ সেকেন্ড ছোট করা যেত । মাঝখানটা কিছুটা ঝুলে গিয়েছে !

এবার আসি ক্রিয়েটিভ রেন্ডিশনে । এ্যাটাকিং এ্যাড নিয়ে আমার কোনো এ্যালার্জি নেই । আমরা নব্বই দশকের কিশোরেরা কোক-পেপসির এ্যাটাকিং সব কম্যুনিকেশন দেখতে দেখতে বড় হয়েছি ।

তাই সরাসরি এমন এ্যাটাকে বেশ একটা মজাই লাগে । আর আমার তূণে যদি প্রতিযোগীকে যৌক্তিকভাবে এবং এথিক্যালভাবে সরাসরি এ্যাটাকের মত কোনো অস্ত্র থাকে, তবে আমি এ্যাটাক করব না কেন ? বিশেষত: মার্কেটে যে চ্যালেন্জার হিসেবে আসে তাকে এ্যাটাক করতে হবেই, তাছাড়া পাত্তা পাবার খুব একটা সম্ভাবনা নেই ।

তবে নগদের এ্যাড সিরিজের ক্রিয়েটিভ রেন্ডিশনে যেটি ভুল লেগেছে সেটি হচ্ছে সেটি হচ্ছে এ্যাটাকটা ‘বিকাশ’ কে নয় বরং যেন করা হয়েছে ‘বিকাশের ব্যবহারকারীদেরকে’ ! খেয়াল করে দেখুন ‘বেকুব’ কথাটা সরাসরি মুখের উপর বলা হয়েছে কাকে ? ব্যবহারকারীকে । আমি নিজে গেল ৬ বছর ধরে বিকাশ ব্যবহার করি ।

বিকাশের সার্ভিসের অনেক ভুল-ত্রুটি, খরচ ইত্যাদি আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তারপরও আমি নিত্যদিন বিদ্যুত-ইন্টারনেটের বিল দিতে, দোকানে, অনলাইন পেমেন্টে, কয়েকজনকে রেগুলার টাকা পাঠাতে, মোবাইল রিচার্জ করতে …. ইত্যাদি অসংখ্য কাজে বিকাশ ব্যবহার করছি ।

তারমানে কি আমি ‘বেকুব’? আমাকে বেকুব হিসেবে সরাসরি গালি দিয়ে আপনি আশা করছেন আমি আপনার সার্ভিস ব্যবহার করা শুরু করব ? সিরিয়াসলি !?!
আপনি যাকে আপনার ঘরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, শুরুতেই তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির উপর একটা গালি দিয়ে তারপর দাওয়াতপত্রখানা তাঁর হাতে দিচ্ছেন !

এরপর আশা করছেন যে তিনি আপনার দাওয়ার খুশি মনে গ্রহণ করবেন ? কারণ আপনি তাঁকে ৫-১০ টাকার লাভ দিচ্ছেন । ভাই, অনেকের কাছেই কিন্তু ৫-১০ টাকা ব্যপার নয়, কিন্তু অপমানটা ব্যপার । বিকাশের Users group এখন কিন্তু সবধরণের Class of people-দের ভেতরেই ছড়ানো । আপনি সবাইকে এক বাক্যে ‘বেকুব’ বলতে পারেন না । আর বলে আর যাই হোক আপনার কাস্টোমার বানাতে পারেন না । Brand হিসেবে এটি অত্যন্ত Arrogant ব্যবহার এবং সোজা সাপটা আমি বলব একটা বড় ভুল ।

এক্ষেত্রে বিকাশেরই একটা উদাহরণ দেই । সেই এ্যাডটার কথা মনে আছে ? ট্রেন চলছে । চলন্ত ট্রেনে বসে একজন তরুন (মনে হয় ভার্সিটি পড়ুয়া) ছেলেকে তখনই কাউকে টাকা পাঠাতে হবে, কিন্তু তাঁর বিকাশ এ্যাকাউন্ট নেই । তখন সামনের সিটে বসা একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা বলে উঠলেন “তোমার মোবাইলে বিকাশ এ্যাকাউন্ট নেই ? তুমি না শিক্ষিত ছেলে !”

এখানেও কিন্তু এ্যাটাক করা হয়েছে, কিন্তু কি চমৎকারভাবে ! পজিটিভলি ! সাথে চমৎকার একটা ক্রাইসিস বা রিয়েল-লাইফ সমস্যা দেখিয়ে – “প্রয়োজন বলে কয়ে আসে না । তাই সেই প্রয়োজনের জন্য থাকা সহজ সমাধানটি আগে থেকেই গ্রহণ না করে উল্টো সমস্যা আসার পর হাত কামড়ানোটা কোনো স্মার্ট-শিক্ষিত-বুদ্ধিমান মানুষের কাজ না ।”

এই এ্যাড দেখার পরে আমার মাথায়ও ঘুর ঘুর করছিল “আমিও তো শিক্ষিত ছেলে, তবে একটা বিকাশ এ্যাকাউন্ট করতেই হবে । কারণ টাকা পাঠাবার প্রয়োজনতো আমারও সব সময়ই হয় । তখন দোকানে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় ।”

অর্থাৎ, আমাকে বিকাশ খোঁচাটা ঠিকই দিয়েছিল, আমার মাথায় টেনশনটা ঠিকই ঢুকিয়েছিল, তবে সেটি পজিটিভভাবে । আমাকে গালি দিয়ে না । আমাকে যদি বিকাশ এসে বলত আপনি বিকাশ এ্যাকাউন্ট খোলেন, না হলে আপনি একটা ‘বেকুব’ । আমার মনে হয় আমি জীবনেও ‘বিকাশ এ্যাকাউন্ট’ খুলতাম না ।

নগদের ক্রিয়েটিভ রেন্ডিশনের ঠিক এই জায়গাটিতেই আমার প্রচন্ড ভুল লেগেছে । ক্লাসিক Story telling-এ নেগেটিভ ইমোশনের ব্যবহার থাকবেই । তবে ব্র্যান্ড সেই নেগেটিভ ইমোশনকে পজেটিভ করতে এগিয়ে আসবে ‘Empathy’ দেখিয়ে, ‘Empathetic’ হয়ে । কিন্তু উল্টো ব্র্যান্ড নিজেই যদি কনজ্যুমারকে ছোট মনে করে, তাকে নীচুস্তরের কেউ হিসেবে ট্রিট করে, তবে সেই ব্র্যান্ড আর যাই হোক বন্ধু হতে পারে না ।

দ্বিতীয় যে ব্যপারটি কানে লেগেছে সেটি হলো ভাষার বা সম্বোধনের ব্যবহার । এ্যাড মেকিং এ ‘ভয়েস-অফ-গড’ বলে একটা কথা আছে, যেটিকে আমরা ‘ভয়েস-অফ-ব্র্যান্ড’ও বলে থাকি । এই এ্যাড সিরিজে চরিত্রের সাথে যে অদৃশ্য ভয়েসখানা কথা বলেছে সেটিই হচ্ছে এই এ্যাডের ‘ভয়েস-অফ-গড’ বা ‘ভয়েস-অফ-ব্র্যান্ড’ । আর চরিত্রগুলো হচ্ছে বিকাশ ব্যবহারকারী – অর্থাৎ আপনি-আমি । খেয়াল করে দেখুন কি সম্বোধনটা ব্যবহার করা হয়েছে – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ‘তুই’ ! আমার কাছে এটি disastrously arrongant মনে হয়েছে !

কেন ? বলছি। 

আপনি আমাকে ‘তুই’ বলতে পারেন দু‘টি প্রক্ষাপটে –
১) যদি আমি আপনার বন্ধু হই ।
২) যদি সামাজিক মর্যাদায় আমি আপনার অনেক নীচের হই (যদিও এই ধারণাটি প্রচন্ড সেকেলে এবং রীতিমত অবজেকশনেবল) ।

নগদের কম্যুনিকেশখানা বিকাশ ইউজারদের উদ্দেশ্যে করা, অর্থাৎ যাদের এখনও নগদের সাথে কোনো সম্পর্কই নেই । সুতরাং, সম্পর্ক যেহেতু এখনও তৈরীই হয়নি, সুতরাং বন্ধু হবার তো প্রশ্নই ওঠে না । তারমানে প্রথম প্রক্ষাপটখানা বাদ ।

বাকী রইল দ্বিতীয়টি । সেই প্রেক্ষাপটের হিসেবে নগদের চোখে বিকাশ ব্যবহারকারীগণের অবস্থান অনেক অনেক নীচু শ্রেণীর এতই নীচু যে তাদেরকে অবলীলায় ‘তুই-তোকারী’ করা যায় ! কি ভীষণ পার্সোনাল এ্যাটাক !! এবং যাদের পকেট থেকে আমার ব্র্যান্ডের রেভিনিউ আসবে তাঁদেকে শুরুতেই কি ভয়াবহ অপমান !!!

নেগেটিভ ইমোশন নিয়ে খেলতে চাইলে আপনি যাঁদেরকে কনজ্যুমার বানাতে চাইছেন তাঁদেরকে আপনি ভয় দেখাতে পারেন, শংকার ভেতর ফেলতে পারেন, দু:খের স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে পারেন, আইডিন্টিটি ক্রাইসিস বা স্ট্যাটাস ক্রাইসিসে ফেলতে পারেন, এমনকি প্রচন্ড টেনশনেরও ফেলে দিতে পারেন ।

পৃথিবীর অসংখ্য ব্র্যান্ড অনেক যুগ ধরেই এগুলো করে চলছে । কিন্তু যেটি আপনি কখনই করতে পারেন না সেটি হচ্ছে ‘অপমান’, বিশেষত: নিজের ব্র্যান্ডকে দিয়ে সরাসরি সেই অপমান করানো । এটি এককথায় যাকে বলে আত্নহত্যা !

কনজ্যুমার কিন্তু কোম্পানী খোঁজে না, ব্র্যান্ডের নাম-লোগোও খোঁজে না । সে খোঁজ করে সমাধান । সেই সমাধান যে তাকে দিতে পারবে তার কাছেই সে ছুটে যায়, এবং ধীরে ধীরে তাকেই সে বন্ধু কিংবা ভরসার জায়গা হিসেবে ধরে নেয় । এই জায়গাটিতে ব্র্যান্ডের দায়িত্ব Empathetic হয়ে সমাধান নিয়ে কনজ্যুমারের পাশে দাঁড়ানো ।

আমি যদি কনজ্যুমারকে শুরুতেই গালাগাল দেই, তাকে কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি বলি, সর্বপরি তাঁকে আমার চাইতে নীচু শ্রেণীর হিসেবে ট্রিট করি, তবে আর যাই হোক সে আমাকে কখনই বন্ধু ভাববে না । হয়ত আমার ক্ষমতা আর তাঁর উপায়হীনতার জন্য আমার কাছে কিছু সময়ের জন্য আসবে, কিন্তু যেই মাত্র সুযোগ পাবে সে আবার অন্যের কাছে চলে যাবে ।

শেষ করব অন্য একখানা এ্যাংগেল দিয়ে । শুরু থেকেই দেখছি নগদ একমনে বিকাশের ইউজারদের টার্গেট করে সব কম্যুনিকেশন এবং অন্যান্য Marketing activities করে যাচ্ছে । ‘নগদ’ কেন ‘বিকাশ’এর গ্রাহকদেরই একমাত্র Source of Business (SoB) হিসেবে বেছে নিয়েছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয় । বাংলাদেশে ফর্মাল ব্যাংকিং সেক্টরের পেনিট্রেশন পূর্ণবয়ষ্ক জনগোষ্ঠীর মাত্র ৪৭%, তাও কৃষকদের এবং প্রান্তিক মানুষদের জন্য করা ১০ টাকার এ্যাকউন্ট সহ, যদিও সেগুলো বড় অংশই এখন অকেজো ।

তাই সেগুলোকে এ্যাক্টিভ ধরে হিসেব করলেও প্রায় ৬ কোটি পূর্ণবয়ষ্ক মানুষ এখনও ফর্মাল ব্যাংকিং সেক্টরের বাইরে আছে । অন্যদিকে বিকাশের গ্রাহক সংখ্যা মোটামুটি চার কোটি । এর ভেতর একটা অংশের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে । সেই অংশটি যদি ২০% ও হয়, তার মানে এখনও দেশে অন্তু:ত পৌনে তিন কোটি লোক আছে যাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট কিংবা বিকাশ এ্যাকাউন্ট কোনোটিই নেই ।

‘নগদ’ কেন এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে টার্গেট না করে ক্রমাগত Existing users দেরকেই টার্গেট করে যাচ্ছে, বিষয়টা আমার ঠিক বুঝে আসে না । হয় তো, নতুন এই technological adaptation এর জন্য Existing users, যারা ইতিমধ্যেই এই ধরণের টেকনলজী (অর্থাৎ, বিকাশ) ব্যবহার করছেন তাঁদেরকে ধরাটা সহজ বেশী । যেখানে নন-ইউজারদেরকে এই MFS-এর আওতায় আনার জন্য আরও কাঠখড় পোড়াতে হবে, অর্থাৎ কাজটি কঠিন ।

তবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বিকাশ’ কিন্তু এই সাহসটা দেখিয়েই ১০ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল । সেখানে সরকারী অংগ-প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘নগদ’-এর কাছ থেকে এই সাহসটুকু কিন্তু আমরা আশা করতেই পারি । আর সত্যি কথা বলতে বরং নগদের জন্য কাজটা এখন বরং তুলনামূলকভাবে কম কঠিন । কারণ বিকাশ যখন যাত্রা শুরু করেছিল তখন এদেশে MFS কি তা একটা সাধারণ মানুষও চিনত না; সেখানে এখন তো এই কনসেপ্টটি সবাই জানে এবং বোঝেও ।

তাই যারা এখনও MFS-এর আওতায় আসেনি, তাঁদেরকে নিয়ে আসতে ফোকাস করলেই কি ভাল হত না ? কেন সেটি না করে ‘নগদ’ শুধু মাত্র বিকাশের গ্রাহকদেরই ধরার জন্য সকল কাঠখড় পোড়াচ্ছেন, তা নিশ্চয়ই নগদের বিজ্ঞ স্ট্র্যাট্রেজী টিমই ভাল বলতে পারবেন । আমি সেখানে কোন আদার ব্যপারী !
আজকের লেখাখানা এখানেই শেষ করছি ।

সিরিজ এ্যাডের কনসেপ্ট, দারুন কাস্টিং এবং ক্লীয়ার অবজেকটিভকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন সাজাবার জন্য ‘নগদ’কে ধন্যবাদ । তবে লেখায় তুলে ধরে নেগেটিভ বিষয়গুলো কিভাবে এই ক্যাম্পেইন এবং সাথে সাথে নগদের লং-টার্ম ব্র্যান্ড ইকুইটিতে ইম্প্যক্ট করবে তা দেখার এবং বোঝার অপেক্ষায় রইলাম ।

আরেকটি কথা – পুরো পর্যবেক্ষণখানাই নিতান্তই প্রফেশনাল দৃষ্টিভংগী থেকে লেখা এবং আমার ব্যক্তিগত মার্কেটিং প্রফেশনে এত বছরে ঠেকে-দেখে শেখা থেকে এ্যানালাইসিস করা । আশা করি কেউ ব্যক্তিগত ভাবে নেবেন না । নগদের মার্কেটিং টিমের অভিজ্ঞ এবং জ্ঞানীগুণি ভাই-বেরাদারদের সাথে আবার কফি খাবার ইচ্ছা রেখে আজ বিদায় নিলাম ।

পড়ুনঃ BKASH VS NAGAD: OUR OWN ‘GAME OF THRONES’!