এই মুহূর্তে ৪১তম বিসিএস প্রার্থীরা যে কৌশলে প্রস্তুতি গোছাতে পারেন!

লিখেছেন – শরীফ স্যার।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪১তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের ১৯ মার্চ। আর ৪২তম প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। এ মুহূর্তে প্রার্থীরা নিচের পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে নতুনভাবে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন।

মাথা ঠাণ্ডা রাখুন।
কারণ বলা হয়ে থাকে, “Cool head and warm heart can solve most of the problems of the world.”

মন শক্ত করুন।
আমি অসংখ্য নজির দেখাতে পারব যারা পরীক্ষার আগের দুই মাস ভালোভাবে পড়াশোনা করে প্রিলিমিনারি পাস করেছেন। আবার এমন নজিরও আছে, বছরের পর বছর পড়াশোনা করেও প্রিলিমিনারির বৈতরণী পার হতে পারেননি। অতএব, দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ হোন।

শয়তানের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন।
পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে শয়তান বিভিন্ন সুরতে প্রার্থীদের সামনে হাজির হয়। কখনো আপনার আপনজন, বন্ধুবান্ধব, বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের কাঁধে সওয়ার হয়ে তাদেরকে সুড়সুড়ি দেবে যাতে তারা আপনাকে বিভিন্ন স্টাইলে পেইন দেয় এবং ডিস্টার্ব করে। কখনো এসে আপনাকে খুব আরাম করে হাত-পা মেসেজ করে দেবে, যাতে আরো ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে থাকেন। অথবা, আপনার মধ্যে হঠাৎ করে পারোলৌকিক চিন্তা ঢুকিয়ে দেবে, “একদিন তো মরেই যাবো, এসব পরীক্ষা-টরীক্ষা দিয়ে কী হবে!” অথবা আপনার মধ্যে হঠাৎ ভ্রমণপিপাসা, আড্ডা আসক্তি বা রেস্টুরেন্টপ্রীতি জাগিয়ে তুলবে, “দুনিয়া কা মজা লেলো, দুনিয়া তোমারি হে!”
এসব কুলক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই মনে করবেন আপনি সাক্ষাৎ শয়তানের ধোঁকায় পড়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ…” পড়ে আবার নব উদ্যমে উজ্জীবিত হয়ে পড়াশোনা শুরু করে দেবেন।

ইস্তফা দিন।
প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির সাথে সাংঘর্ষিক এমন সকল ধরনের চাকুরি, টিউশনি থেকে ইস্তফা দিন বা ছুটি নিন। আপাতত সকল ধরনের জনসংযোগ, তর্ক-বিতর্ক, কলহ-বিবাদ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে দূরে রাখুন।

ঔষধ সেবনের পূর্বে রোগ নির্ণয় করুন।
প্রস্তুতির শুরুতে আপনার স্ট্রং জোন এবং উইক জোন শনাক্ত করুন। যেকোনো একটি ভালো মডেল টেস্ট বই থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করে পাঁচটি মডেল টেস্ট ঘড়ি ধরে অংশগ্রহণ করুন।
এবার বিষয়ভিত্তিক গড় নম্বর বের করুন।
যে বিষয়টিতে আশঙ্কাজনকভাবে নম্বর কমে যাচ্ছে সেটিতে আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন।

৪১তম প্রার্থীরাও ধরে নিন,
আপনাদের পরীক্ষাটিও আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে, এবং আপনি অবশ্যই ২৬ ফেব্রুয়ারিতে নিজে নিজেই একটি চূড়ান্ত মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করবেন।
অতএব, যারা এ সময়ের মধ্যেই প্রিলিমিনারির মৌলিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন, তাদের প্রিলি টেকার সম্ভাবনা বেশি উজ্জ্বল হবে। এরপর ১৯ মার্চ পর্যন্ত যতদিন সময় পাবেন, ততদিন আপনার পড়াগুলো বেশ কয়েকবার রিভাইস বা রিভিউ করে নিজেকে আরও বেশি পরিমাণে পোক্ত করবেন। সে সময় নিজে নিজে প্রচুর পরিমাণে মডেল টেস্ট সলভ করবেন।

আর যারা মনে করছেন যে, এখনো প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি ভালো ভাবে গুছিয়ে নিতে পারেননি, তারা এই মুহূর্তে আগামী ৪০ দিনের জন্য (১৪ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) একটি কার্যকরী পাঠপরিকল্পনা (এক চিল্লা!) গ্রহণ করত পারেন। এই পরামর্শটি এক বছর আগেও দিয়েছিলাম। যেমন:

১) ইংরেজি গ্রামার এবং সাহিত্য: (২০+১৫= ৩৫)
সিলেবাস অনুযায়ী গ্রামারের গুরুত্বপূর্ণ টপিকসমূহের Rules and Exercise প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যের সাহিত্যের যুগ বিভাগ, গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকগণ, তাদের সাহিত্যকর্ম ও উক্তিসমূহ, লিটারেরি টার্মস ইত্যাদি প্রতিদিন দেড়-দুই ঘণ্টা সময় ধরে টানা ৪০ দিন পড়বেন। (পাশাপাশি প্রতিদিন টপিক ভিত্তিক বেশ কিছু MCQ প্র্যাকটিস করুন)

২) মানসিক দক্ষতা ও গণিত: (১৫+১৫=৩০)
>> প্রথমে মানসিক দক্ষতার জন্য যেকোনো একটি বই সিলেবাস অনুযায়ী খুব ভালোভাবে পড়ে ফেলুন। এবং মনে মনে সাহস সঞ্চয় করুন, এ বিষয়ে ১৫ নম্বরের মধ্যে আপনি অন্তত ১০/১২ পাবেন (ইনশাআল্লাহ)।
>> আর রিটেন পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রিলিতে গণিতে প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। অতএব গণিতের জন্য প্রথমে প্রিলি এবং রিটেনে সিলেবাস সমন্বয় করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলি এবং রিটেন উভয় পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ- গণিতের এমন টপিকগুলো (সহজ থেকে কঠিন ভিত্তিতে) প্রতিদিন দুয়েক ঘণ্টা সময় ধরে প্রস্তুতি নিতে থাকুন। একটা টপিক খুব ভালোভাবে শেষ না করে কোনমতেই অন্য টপিকে যাবেন না, এবার ওই টপিকটিতে যে কয়দিনই সময় লাগুক।

৩) বাকি ৪ বিষয় যেভাবে পড়বেন:
এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বিষয় প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা সময় ধরে টানা ১০ দিনে সিলেবাস অনুযায়ী একবার পড়ে শেষ করবেন। যেমন:
i) প্রথম দশ দিনে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং ভূগোল একটানা ১০ দিন পড়বেন।
ii) এরপর বাংলাদেশ বিষয়াবলি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন টানা ১০ দিন।
iii) তৃতীয় ১০ দিন বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য।
iv) শেষ ১০ দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
(এভাবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোট ৪০ দিনে সবগুলো বিষয় একবার কমপ্লিট করার পর আবার প্রতি বিষয়ে ৫ দিন করে রিভাইস করবেন। এছাড়াও প্রতিদিন মডেল টেস্ট চেক করার সময় কোন কোন টপিক গুলোতে আটকা পড়ে যাচ্ছেন, আপনার সেই দুর্বল দিকগুলো সনাক্ত করে পুনরায় সলভ করবেন।)

এক কথায়, যা বুঝাতে চাইলাম:
এখন থেকে প্রতিদিন ৩ বিষয় পড়বেন-
১) ইংরেজি
১) মানসিক দক্ষতা ও গণিত
৩) যেকোনো ১ বিষয় (১০ দিন)

অবশ্যই মাথায় রাখবেন:
>> অবান্তর, অহেতুক, ভারি-ভারি, বোকা-বোকা ও তথ্য ভারাক্রান্ত পড়াশোনা বাদ দিয়ে মৌলিক এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যত্ন সহকারে পড়ুন।
>> কারণ প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১২০/১৩০ নম্বর সব সময় নিরাপদ।
>> সব সময় সিলেবাস অনুসরণ করে পড়বেন।
>> বইয়ের টেক্সট অংশটি প্রথমে নিজে নিজে খুব মনোযোগ সহকারে একবার পড়বেন। এরপর টেক্সট এর নিচে প্রদত্ত MCQ গুলো দুজনে মিলে ভাইবা পদ্ধতিতে (একজন অন্যজনকে প্রশ্ন করে) পড়বেন।

৪৩তম বিসিএস প্রার্থীরা,
আগামী ১৯ মার্চকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিন।
মনে করুন, সেদিনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটিতে আপনিও অংশগ্রহণ করবেন।
আমার বিশ্বাস, যারা মনেপ্রাণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মাহরুম করেন না।

জয় ছিনিয়ে আনার এখনই সময়!
নিরন্তর শুভকামনা রইলো।