ইউটিউব থেকে ইফেক্টিভভাবে শেখার ৮ টিপস

প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এপ ডেভেলপমেন্ট, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, ডাটা সায়েন্স, ব্লকচেইন, QA, ডেভঅপ্স, সফটওয়্যার প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টসহ টেকনোলজি এর সব সাইড এর ভরা ভরা টিউটোরিয়াল, প্লেলিষ্ট, গাইডলাইন ডজনে ডজনে ইউটিউবে পাওয়া যায়।

তারপরেও আমরা কেন শিখি না? কেন লেগে থাকি না? কেন আমরা ইউটিউব থেকে ইফেক্টিভভাবে শিখতে পারি না?

১. ইউটিউব হচ্ছে ডিস্ট্রাকশন এর কারখানা। শান্তি মতো দশটা মিনিট একটা টিউটোরিয়াল দেখা যায় না। ডানপাশ থেকে রোনালদো, মেসি, আরিয়ানা গ্রান্ডে, BTS, ব্ল্যাক পিঙ্ক, সবাই ডাকতে থাকে। “আমারে ক্লিক কর”, “আমারে ক্লিক কর”। এইখানে মজা, এইখানে ফান, এইখানে এন্টারটেইনমেন্ট।

ব্যস, একবার একটা ভিডিওতে ক্লিক করলেই। সেইদিনের টিউটোরিয়াল বলো, শেখা বলো, লার্নিং বলো সব খতম।
তাহলো করবোটা কি?

সমাধান: ক্রোম ব্রাউজারে: Unhook – Remove YouTube Recommended Videos নামে একটা ক্রোম এক্সটেনশন ইনস্টল করো। দেখবে ইউটিউবের হোম পেইজে কোন রিকমেন্ডেশন নাই। ডানপাশে রিকোমেন্ডেড ভিডিও নাই। তাই, শান্তিমতো ভিডিও দেখতে পারবে।

২. রিসোর্চ আছে, টিউটোরিয়াল আছে, প্লেলিস্ট আছে। মাগার সেই রিসোর্চ বসে বসে, সময় দিয়ে, রেগুলারিটি মেইনটেইন করে দেখার ধৈর্য্য। পাঁচ মিনিট না যেতেই মোবাইল ফোন নোটিকেশন দিয়ে ডাকতে থাকে। “আমাকে চেক কর”। “আমাকে চেক কর”।

এমন একটা ভাবে যে, তুমি ফোন না ধরলে– ভ্লাদিমির পুতিন দুনিয়াটাকে পুত করে দিবে। মেসি আঙ্কেলের Ballon d’Or রবার্ট ভাইয়ের কাছে চলে যাবে।

আমরা মোবাইল ফোনের সাথে এতো বেশি এডিক্টেড যে। গড়ে প্রতিদিন ১৬০ বার মোবাইল ফোন চেক করি। কোন নোটিফিকেশন না আসলেও চেক করে।

মোবাইল ফোনকে এলার্ম হিসেবে ইউজ করার অজুহাতে, রাতে বিছানায় শুয়ে দেড় ঘন্টা আর ঘুম থেকে উঠে এক ঘন্টা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি।
তাহলে করবোটা কি?

সমাধান: একটু চেষ্টা করলেই: StayFree – Stay Focused & Self Control টাইপের কিছু এপ আছে সেগুলা দিয়ে চেক করতে পারি। আমরা কতটা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে আছি।

৩. ইউটিউবে নাচ-গান-নাটক-সিনেমা-রোস্টিং দেখা আর টিউটোরিয়াল দেখা এক না। এন্টারটেইনমেন্ট দেখে গেলে আনন্দ পাবে। কিন্তু টিউটোরিয়াল দেখে গেলে কাজ হবে না। বরং ভিডিও শেষ হওয়ার আগেই তোমার নলেজ শেষ।
সমাধান কি?

সমাধান: দেখার সাথে সাথে সিরিয়াসলি প্রাকটিস করতে হবে। যে ভিডিও দেখাচ্ছে সেটা চোখ বন্ধ করে তার মতো দেখে দেখে টাইপ করা না। বরং বুঝে প্রাকটিস করা। দরকার হলে। কোন একটা ভিডিওতে যে জিনিসটা দেখানো হচ্ছে সেটা ২০-৩০% নিজের মতো করে চেইঞ্জ কিছু প্রাকটিস করতে পারলে। ইউটিউব থেকে শেখাটা পোক্ত হবে।

৪. হয়তো তিন মাস বা ছয়মাস যে এক বছর আগের বানানো ভিডিও। তুমি মনের মতো ভিডিও পেয়ে খুশিতে লাফাইতে লাফাইতে শুরু করে দিলে। তিন ঘন্টা প্রাকটিস করার পর। ভিডিও এর ৮০% শেষ করার পর।

এমন একটা এরর খেয়ে ফেলছো। যে সামনে এগুতে পারতেছো না। কোনভাবেই হচ্ছে না। এখন কি করবে? তোমার তিন ঘন্টা সময় মাটি হয়ে গেলো !!!
সমাধান কি?

উত্তর: বড় ভিডিও বা ছয় মাসের চাইতে পুরাতন ভিডিও দেখা বা প্রাকটিস শুরু করার আগে দুই মিনিট newest কমেন্টগুলো দেখে নাও। কারণ তুমি যে সমস্যা ফেইস করছো।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই প্রব্লেম আরো অনেকেই ফেইস করে থাকবে। তাই বড় ভিডিও শুরু করার আগে newest কমেন্ট এক দেড় মিনিট দেখে নিলেই তুমি আগেই আঁচ করতে পারবে। এই রকম কোন ক্যারপা আছে কিনা।

তাছাড়া, তুমি তিন ঘন্টা পরে ঝট পেঁকে গেলে। তোমার পুরা সময় নষ্ট হয়ে যায়নি। হয়তো তুমি ফিনিশ করতে পারোনি। তবে যতটুকু করতে পারছো। ততটুকু ঠিকই কাজে লেগেছে। সেটা কোন না কোন সময় কাজে লাগবে।

৫. টেকনোলজি এমন একটা সেক্টর যেটা শিখতে গেলে তুমি এরর খাবেই। সেই এরর ইউটিউব এ কেউ সল্ভ করে দিবে না। হেল্প করবে না। ইউটিউব ভিডিও নিচে কমেন্ট করলে সাধারণত রিপ্লাই পাবে না। পেলেও যেই উত্তর দিবে সেটা দিয়ে তোমার সমস্যা সমাধান করতে পারবে না।
তাহলে সমাধান কি?

উত্তর: বেশিরভাগ ইউটিউব চ্যানেলের এর কমিউনিটি গ্রূপ থাকে। ডিসকোর্ড সার্ভার বা স্ল্যাক গ্রূপ থাকে। সেগুলা সেই চ্যানেলের ভিডিও এর ডিস্ক্রিপশনে গেলেই খুঁজে পাবে। তাছাড়া আলাদা কিছু সাইট আছে। যেমন স্ট্যাকওভারফ্লো। ফেইসবুক গ্রূপ আছে।

যেমন, programming hero community, Young Coders: Learn Programming, talk js, Learn with Sumit Community, ইত্যাদি।

৬. একটা জিনিস বুঝতে বুঝতে আরেকটা জিনিস চলে আসছে। এখন আবার পিছনে ক্লিক করলে অনেক পিছনে চলে যায়। আর বড় ভিডিও হলে (৬ ঘন্টা বা ৭ ঘন্টার ভিডিও হলে তো কোন কথাই নাই ) জাস্ট হালকা একটু ক্লিক করলেই ২০ মিনিট পিছনে বা সামনে এগিয়ে যায়। আবার বসে বসে হুদাই দেখতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়।
সমাধান কি?

উত্তর: কিছু কীবোর্ড শর্টকাট শিখে রাখো :
কিবোর্ডের লেফট এরো চাপ দিলে: ভিডিও ৫ সেকেন্ড পিছনে যাবে

রাইট এরো চাপ দিলে: ভিডিও ৫ সেকেন্ড সামনে যাবে
j চাপ দিলে: ১০ সেকেন্ড পিছনে যাবে
l চাপ দিলে: ১০ সেকেন্ড সামনে যাবে
> চাপ দিলে: ভিডিও এর স্পিড বাড়বে
< চাপ দিলে: ভিডিও এর স্পিড কমবে
0 চাপ দিলে: ভিডিও আবার একদম প্রথম থেকে শুরু হবে

1 থেকে 9 পর্যন্ত যেকোন সংখ্যা চাপ দিলে ভিডিও 10% থেকে 90% পজিশন থেকে শুরু হয়ে।
/ চাপ দিয়ে সরাসরি সার্চ দেয়া শুরু করতে পারো এবং লেখা শেষ হলে এন্টার চাপ দিলে তোমাকে সার্চ রেজাল্ট দেখাবে।

৭. ইউটিউব এর ভিডিও যখন খুশি তখন চাইলেই দেখা যায়। এইটা যেমন একটা সুবিধা আবার তেমন একটা অসুবিধাও। যেকোন সময় দেখতে পারবো বলে। এখনই দেখতে হবে সেটার কোন তাড়া নাই।

তাই বেশিরভাগ সময় আমরা পরে দেখবো বলে রেখে দেই। বা watch later লিস্টে রেখে দেই। তার ফলে দেখা যায়। পরে আর দেখা ই হয় না। এইভাবে কত কিছু যে হারিয়ে যায়। রয়ে যায়। তার কোন শেষ নাই।
সমাধান কি?

সমাধান হচ্ছে ডেইলি একটা নিদৃষ্ট সময় ফিক্সড করে রাখা। হতে পারে সন্ধ্যার পরে। বা দুপুরে ভাত খাওয়ার তিনটা ঘন্টা আগে থেকে এই সময় টুকু আমি শিখবো। প্রাকটিস করবো।

এই রকম ডেডিকেটেড টাইম রাখলে এবং নিজের উপর কিছুটা জোর খাটালে তাহলে নিজেকে দিয়ে কাজ করানো হবে। নচেৎ শেখার জায়গায় শেখা পড়ে থাকবে আর তোমার জায়গায় তুমি পড়ে থাকবে।

৮. অনেকদিন আগে একটা ভিডিও দেখছিলাম। কি নাম ছিল পুরাপুরি মনে নাই। এখন বার সার্চ দিয়েও খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু সেই ভিডিওটা দরকার। ক্যামনে তারে খুঁজে পাবো?
সমাধান কি?

উত্তর: ইউটিউবে যাও। বামপাশে মেনু তে ক্লিক করো। তারপর Watch history তে ক্লিক করো। এরপর ডানপাশে “Search watch history” দেখতে পাবে। সেখানে গেলে তুমি আগে যে সব ভিডিও দেখেছো সেগুলা এর মধ্যে সার্চ করে ইজিলি তোমার দেখা ভিডিও থেকে কাঙ্খিত ভিডিও খুঁজে বের করা সহজ হয়ে।

তেলাপোকার বাম্পার ফলন থেকে শুরু করে মঙ্গল গ্রহে আলু চাষ পর্যন্ত সব টিউটোরিয়াল ইউটিউবে আছে। তুমি ঠিক মতো ধৈর্য্য ধরে সেটা থেকে শিখে নিতে পারলে। সময় একটু বেশি লাগবে। এক চ্যানেলে বা এক জায়গায় সব একসাথে না পেলেও খুঁজে বের করতে পারলে, আটকে গেলে সমাধান করার এবিলিটি গ্রো করতে পারলে তোমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

লেখকঃ প্রোগ্রামার