বিকাশ বমাম নগদঃ প্রতিযোগিতা দুটি আলাদা সেগমেন্টে

Bkash Vs Nagad: The Art of Business Wars!

বছরখানেক ধরেই আমাদের চোখের সামনে বেশ জমে উঠেছে দেশী মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের মধ্যের Brand War!
একদিকে MFS সেক্টরে দীর্ঘদিন দাপটের সাথে নেতৃ্ত্ব দেয়া ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি ‘bKash’, অন্যদিকে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ – কিছুদিন পরপর একেকটা নতুন ক্যাম্পেইন আসে আর ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্সরা তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড় তোলেন কিবোর্ডে।

আমরা ব্র্যান্ড কাস্টোডিয়ানরা যখন বিকাশ এবং নগদের বিভিন্ন এক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা করবো তখন শুধুমাত্র সাধারণ কাস্টোমারের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখলেই চলবে না। আমাদেরকে আলোচ্য ব্র্যান্ডের পজিশনিং বুঝতে হবে, লং টার্ম ভিশন মিশনে চোখ বুলাতে হবে, সেই অনুযায়ী বিজনেস স্ট্র্যাটেজির কাটাছেড়া করতে হবে।
‘Bkash Vs Nagad: The Art of Business Wars’ এই মিনি কেইস স্টাডিতে আমরা FinTech কোম্পানি বিকাশ এবং নগদের Business Strategy নিয়ে আলোচনা করবো এবং সেই সাথে কিছু এথিক্যাল পয়েন্টও টাচ করবো।

Generic Competitive Strategies for bkash and Nagad

ম্যানেজমেন্ট থিঙ্কার এবং ফাদার অব মডার্ণ স্ট্রাটেজি Michael Porter এর Generic Strategies মডেল অনুযায়ী, যে কোন অর্গানাইজেশনের Competitive Advantage অর্জনের জন্য তিনটি বেসিক স্ট্র্যাটেজিক অপশন রয়েছেঃ

1. Low Cost,

2. Differentiation এবং

3. Focus Strategy.

লোকাল MFS নিয়ে ব্যাখ্যায় ঢোকার আগে চলুন আমরা এর কোনটা কি সেটা সংক্ষেপে আলোচনা করে আসি।

Low Cost Strategy: যে সকল কোম্পানি এই competitive strategy অপশনটা বেছে নেবে তার চেষ্টা থাকবে সব সময় প্রতিদ্বন্ধী কোম্পানীদের থেকে কম প্রাইসে সম মানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দেয়া। অটোমোবাইল মার্কেটে Toyota, Ford, Nissan, মোবাইল ফোনের মধ্যে Huawei, মোবাইল অপারেটর দের মধ্যে Banglalink ইত্যাদি কোম্পানি এই স্ট্রাটেজি ফলো করে।

Differentiation Strategy: কোম্পানির প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস অফারিং প্রতিদ্বন্ধী কোম্পানিগুলোর থেকে differentiated হতে হবে। গাড়ির মধ্যে Mercedes Benz, BMW, Audi; মোবাইলে iPhone, বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে Grameenphone এই পজিশনিং খুব স্ট্রংলি ফলো করে।

Focused Strategy: নিশ (niche) কাস্টোমার সেগমেন্ট কে টার্গেট করবে। উদাহরণ – Ferrari (luxury Sports Car), Rolls Royce, Tesla (Electric Car) ইত্যাদি।
(উপরের তিনটা বেসিক স্ট্রাটেজি থেকে আসলে 5 টি Generic Competitive Strategy পসিবল, কিন্তু যেহেতু নগদ এবং বিকাশ broad market এ অপারেট করছে তাই এখানে সেই ডিটেইলস এ যাবো না)

Nagad এবং bkash কে কোন জেনেরিক স্ট্রাটেজি ফলো করছে?

জেনেরিক স্ট্রাটেজি খুবই ইম্পর্টান্ট এবং ইন্টারেস্টিং, এবং এটা না বুঝে যখন কেউ বিকাশ নগদের যুদ্ধ নিয়ে কথা বলবে তখনই এনালাইসিস ভুল পথে পা বাড়ানোর সম্ভাবনা বাড়বে।

এখন পর্যন্ত বিকাশ-নগদ কেন্দ্রিক আলোচনাতে এই গ্যাপটাই আমার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে – স্ট্রাটেজিক পজিশনিং না বুঝে আমরা দুই কোম্পানির অফার, প্রাইসিং, ফিচার এগুলোর সরাসরি comparison করতে ঢুকে যাচ্ছি। কিন্তু কোম্পানি কি স্ট্রাটেজি নেবে সেটা তো ডিপেন্ড করবে তার পজিশনিং এর উপর।

Nagad’s Competitive Strategy
2018 সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে নগদের ক্যাম্পেইন, অফার ইত্যাদিতে এটা পুরোপুরি ক্লিয়ার যে নগদ আসলে Low Cost Strategy গ্রহণ করেছে। তাই তার অফারে বারবার ক্যাশ আউট চার্জ কম, ট্রানজ্যাকশন ফি নেই এই বিষয়গুলোকে বারবার হাইলাইট করছে। এগুলোকে কেন্দ্র করেই বার বার ক্যাম্পেইন সাজাচ্ছে।

Bkash’s Competitive Strategy
বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যপারটা এতটা সিম্পল না। বিকাশ যখন জার্নি শুরু করে তখন MFS কনসেপ্টটা বাংলাদেশে পরিচিত ছিল না। বিকাশকে প্রথমে কাস্টোমার বেইজ তৈরি করতে হয়েছে। স্পেশালি তারা গ্রামাঞ্ছলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে ব্যাংকের অল্টারেনেটিভ একটা financial সল্যুশন দিতে চেয়েছে, টাকা পাঠানোর জন্য SA পরিবহনের মতো সার্ভিসের রিপ্লেসমেন্ট দেখাতে চেয়েছে।

তাদের টার্গেট শুরুতে ছিলে lower income rural people. তাই তাদের অফারিং ছিল অনেকটা ফিনান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাংকের তুলনায় differentiated, টাকা পাঠানোর অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় low cost একটা স্ট্র্যাটেজি।

সময়ের সাথে সাথে বিকাশের টার্গেট অডিয়েন্স বেড়েছে, financial inclusion এর net বড় করতে গিয়ে তারা শহুরে মধ্যবিত্ত, স্টুডেন্ট, আরো অনেক অনেক ডিফরেন্ট সেগমেন্ট। যখন তারা এই অডিয়েন্সগুলো টার্গেট করতে শুরু করেছে, তখন তারা নতুন নতুন ফিচার এবং সার্ভিস, মোবাইল এপ ইত্যাদি ইন্ট্রোডিউস করেছে।

যেহেতু মার্কেটে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্ত ছিল DBBL, Surecash, Ucash এগুলোকে ছাড়িয়ে, তাই তারা অনায়াসে Differentiation strategy তে ফোকাস করেছে।
কিন্তু নগদ আসার পর বিকাশের স্ট্রাটেজিতে যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।

লক্ষ্য করুন, আমরা যদি গাড়ির ইন্ডাস্ট্রি দেখি – Low Cost Strategy এর টয়োটা বা নিশানের লো রেঞ্জ মডেলের কারের দাম কমানোতে Differentiation Strategy এর Marcedes Benz, BMW এদের কিছু যায় আসে না।

একইভাবে Huawei, Symphony এর প্রাইসিং এর সাথে iPhone এর খুবই কম সম্পর্ক। কারণ এখানে প্রতি সেগমেন্টে আলাদা আলাদা প্লেয়ার রয়েছে, কম্পিটিশিন হবে নিজের সেগমেন্টে।
অপরপক্ষে যেহেতু বিকাশ এবং নগদ ছাড়া বাংলাদেশের MFS ওয়ার্ল্ডে অন্য কোন প্রমিনেন্ট প্লেয়ার নেই, ভিন্ন স্ট্রাটেজিক পজিশনিং নিতে চাইলেও ব্যপারটা এত সহজ হচ্ছে না।

নগদ যখন ক্যাশ আউট চার্জ 9.99 টাকা+ করেছে, বিকাশ ইমিডিয়েটলি সেটাতে রেসপণ্ড করেনি। কারণ নগদ Low Cost Strategy হলেও বিকাশ Differentiated ই থাকতে চেয়েছে (এবং সেটাই উচিত, পজিশন বার বার চেইঞ্জ করা যাবে না)। অর্থাৎ খরচ কমানোর দিকে ফোকাস না করে ইনোভেশন, নতুন ফিচার, সিকিউরিটি, ease of use, convenience এসবে নজর দিয়েছে।

কিছু কাস্টোমার সেগমেন্টের কাছে যেমন ক্যাশ আউট চার্জটা মুখ্য, কিছু সেগমেন্টের কাছে আবার এটা প্রাইমারি কনসার্ন না। আমি নিজে এখন পর্যন্ত বিকাশ-নগদ থেকে কোনদিন ক্যাশআউট করি নি, সুতরাং ব্যক্তিগত ভাবে এখানে চার্জ কত সেটাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। বরং সেন্ড মানি, শপিং এ পেমেন্ট, ডিসকাউন্ট, সার্ভিস, ইনোভেটেভ ফিচার, কনভেনিয়েন্স এসব আমার কাছে প্রায়োরিটি।

কিন্তু ঐ যে বললাম, মার্কেটে শক্তিশালী প্লেয়ার কম থাকায় সেগমেন্টের বর্ডার লাইনটা খুবই blurred। নগদ কস্টিং ইস্যুটাকে এতটাই প্রকটভাবে সামনে তূলে এনেছে, অনেকেই কমপ্লেইন করা শুরু করেছে যে বিকাশের ক্যাশ আউট চার্জ অনেক অনেক বেশি, ট্র্যানজ্যাকশন ফিও আছে।

Differentiated থাকতে চাইলেও কাস্টোমারদের ডিমান্ড, কম্পিটিশনের প্রেশারে bkash ফাইনালি একটা ‘প্রিয় এজেন্ট’ নাম্বারে আর কম খরচে ক্যাশ আউট, কিছু ‘প্রিয় নাম্বারে’ ফ্রি ট্রান্সফার মানি এগুলো নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

লক্ষ্য করুন, মার্কেটে যত rival brand এর মধ্যে কম্পিটিশন বাড়ছে, কাস্টোমার কিন্তু আল্টিমিটলি ততই বেনিফিটেড হচ্ছে। মার্কেটে কারো মনোপলি থাকলে এই সুবিধাগুলো আমরা পেতাম না।

শুধুমাত্র একটা ‘প্রিয় এজেন্ট’ নাম্বার থেকে কম ক্যাশ আউট চার্জ কি বিকাশের একটা ভাল ট্যাকটিক?
বিভিন্ন আলোচনাতে আমরা দুইধরণের অপিনিয়নই দেখতে পেয়েছি।

একদল বলছেন সবসময় একজনের এজেন্টের থেকে ক্যাশ আউট করাটা কনভেনিয়েন্ট না। আরেকদল বলছে সাধারণত আমরা ক্যাশ আউট বেশিরভাগ সময় একজন বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকেই করি (80 – 20 rule?)। (আবার অনেকে বিভিন্ন এথিক্যাল ইস্যুও রেইজ করছেন, তবে সেই আলোচনাটাতে আমি একটু পরে যাচ্ছি।)

আসলে আমরা যেই আলোচনাটা করছি সেটা প্রায় পুরোটাই একটা থিওরেটিক্যাল, কাস্টোমারের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখা বা পারসোনাল অপিনিয়ন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানির স্ট্র্যাটেজি, পয়েন্ট অব ভিউ আমরা মিস করে যাচ্ছি।

Bkash হচ্ছে Brac ব্যাংকের একটা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, Alibaba এর Ant financial ব্যাকড কোম্পানি। তারা এখন পর্যন্ত মার্কেট তৈরি, প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস ডিজাইন, মার্কেটিং এর পিছনে অনেক অনেক খরচ করেছে। এই ইনভেস্টমেন্টটা বিকাশ লং টার্মে তূলে আনবে এবং প্রফিট করবে এই প্ল্যানিং নিয়ে আগাচ্ছিল। তাই গত কয়েক বছর রেভিনিউ বাড়লেও বিকাশ কিন্তু লসে আছে বলেই দেখিয়েছে।

সেই তুলনায় নগদ অপেক্ষাকৃত রেডিমেড একটা মার্কেট পেয়েছে। TG কে এডুকেট করার পিছনে তার সেভাবে খরচ যায় নি, ফলে তাদের comparatively ওভারঅল বিজনেস ইনভেস্টমেন্ট কম হয়েছে।

বিকাশের প্রফিটে যাবার জন্য তার প্রাইসিং স্ট্রাটেজি সঠিক ভাবে সাজানোটা খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নগদ কমিয়েছে বলে চাইলেই বিকাশ কমিয়ে দিতে পারবে না।

Remember, The primary purpose of a business is to maximize profits for its owners or stakeholders while maintaining corporate social responsibility.

ক্যাশ আউট চার্জ এর মতো ক্রিটিকাল ইস্যুতে তাই বিকাশকে অনেক দিক চিন্তা করে ডাটা ড্রিভেন স্ট্র্যাটেজিক ডিসিশন নিতে হবে।

এজন্য যে ধরণের প্রশ্নের উত্তর বিকাশকে খুজতে হয়েছেঃ

  • ইউজারদের কত পার্সেণ্ট ক্যাশ আউট করে, টোটাল এমান্ট কত
  • কত পার্সেন্ট ক্যাশ আউট একজন এজেন্ট থেকে হয়
  • ক্যাশ আউট চার্জ এর পার্থ্যকের কারণে কি পরিমাণ ইউজারকে বিকাশ নগদের কাছে হারাচ্ছে

আমরা জানি যে,
Revenue = Price * Quantity
Hypothetically, ধরুন বিকাশের আগে ক্যাশ আউট চার্জ ছিল 1.8% এবং একটা নির্দিষ্ট টাইম পিরিয়ডে ক্যাশ আউট হতো 1 কোটি টাকা।

পরবর্তীতে বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ করলো 1.4%, বাইরে থেকে আমাদের মনে হতে পারে এর ফলে বিকাশের রেভিনিউ বা প্রফিট বাড়বে। কিন্তু ধরুন এই পরিবর্তনের ফলে বিকাশে ক্যাশ আউটের পরিমাণ 20% বেড়ে দাড়ালো 1.2 কোটি টাকা।

1.8% Cash Out Charge * 1 Crore Tk Cash Out = 18 lakh taka
1.4% Cash Out Charge * 1.2 Crore tk Cash Out = 16.8 lakh taka

অর্থাৎ ওভারঅল রেভিনিউ কমে গেল!
সুতরাং কস্টিং কমিয়ে দিলেই যে ওভারঅল রেভিনিউ বেড়ে যাবে ব্যাপারটা এমন না। এর সাথে ওপপ্রোত ভাবে জড়িত আছে Price Elasticity of Demand (প্রাইস কত ইউনিট কমালে ডিমান্ড কত ইউনিট বাড়বে) ইত্যাদি।

তাই বিকাশ বা নগদকে macro এবং micro economics চিন্তা করতে হয়, price elasticity দেখতে হয়, maximum প্রফিট কোন পয়েন্টে সেটা বের করতে হয়, ডাটা মডেলিং করে বিভিন্ন অপশনগুলোকে কমপেয়ার করতে হয়, কাস্টোমার সার্ভে করতে হয় ইত্যাদি।

একটা প্রফিটেবল লার্জ স্কেল বিজনেস তৈরি করতে হলে এগুলো করাটাই স্বাভাবিক, না করাটাই বরং সুইসাইডাল।

The Sources of Competitive Advantage

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বিকাশের কাছে কাস্টোমার যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি Agents ও কিন্তু খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিকাশের differentiation strategy তে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এজেন্টরা হচ্ছে a source of competitive advantage. নতুন পলিসিতে হয়তো এজেন্টরা আরো বেশি উপকৃত হবে কারণ এখন তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক লয়াল কাস্টোমার পাবে যারা সব সময় তার কাছ থেকেই ক্যাশআউট করে। এতে তারা বেটার সার্ভিস দিতে চাইবে, earning projection করতে পারবে।

অপরপক্ষে নগদ চাইলে হয়তো কালকেই প্রাইসিং আরো কমাতে পারবে, কারণ নগদের low cost strategy তে একটা মেজর cost driver ডাকবিভাগের সাথে সম্পর্ক (যেটা নিয়ে প্রচুর ধোঁয়াশা আছে) এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত কিছু সুবিধা। কিন্তু নগদ চাইলেই রাতারারি বিকাশের Innovation এবং Number of agents এর মতো sustainable competitive advantage কে ওভারকাম করতে পারবে না।

সেজন্য বিকাশের নগদের সাথে full-fledged price war এ যাবার এই মূহুর্তে প্রয়োজন নেই। বরং বিকাশকে এমন ভাবে স্ট্রাটেজি সাজাতে হবে যেন তার differentiation strategy রক্ষা পায় আবার কাস্টোমারও খুব বেশি নগদে সুইচ করার কারণ না পায় (barrier to switch)।

আর এজন্য বিকাশ যে Generic Strategy নিতে পারে সেটা হচ্ছে Best – Cost (Hybrid) Strategy. অর্থাৎ low cost এবং differentiation দুই স্ট্র্যাটেজির বেস্ট ফিচারগুলো নিয়ে একটা হাইব্রিড স্ট্র্যাটেজি দাড় করাতে হবে বিকাশকে।

প্রতিটি Generic Strategy, অর্থাৎ Low Cost, Differentiation এবং Focused Strategy এর আলাদা আলাদা Drivers রয়েছে, Distinguished Features রয়েছে। স্ট্রাটেজি নির্ধারণে যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিকাশ এবং নগদ যদি সঠিকভাবে স্ট্রাটেজি সাজাতে পারে তাহলে তাদের পরবর্তী মুভমেন্টে এগুলোর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাব।
যদি আপনি জানতে আগ্রহী হন তাহলে এই driver এবং distinguished features গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আমার আরো ডিটেইলড কেইস স্টাডি লেখার ইচ্ছে আছে 🙂

Ethical Issues Rising from bkash and Nagad Campaigns

বিজনেস স্ট্র্যাটেজি এবং মার্কেটিং দুই জায়গাতেই অনেকসময় উপেক্ষিত হয়ে থাকে এথিকাল ইস্যুগুলো। প্রব্লেম হচ্ছে লিগ্যাল ইস্যুগুলোকে খুব সহজেই আইডেন্টিফাই করা গেলেও এথিক্যাল ইস্যুগুলো অনেকটাই gray area।

ফর এক্সাম্পল, আমরা প্রায়ই এরোমেটিক ‘১০০% হালাল সাবান’ কনসেপ্ট নিয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করি। এই ক্যাম্পেইনটা এরোমেটিক সোপ ব্র্যান্ডের জন্য পুরোপুরি বিজনেস সেন্স মেইক করেছিল, তারা মার্কেট প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছিল এবং বাংলাদেশে লাক্স এর বাজার ধসে পড়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে – এরোমেটিক ‘১০০% হালাল সাবান’ এই ট্যাগ ব্যবহার করা কি পুরোপুরি এথিকাল ছিল?

এর দ্বারা কি প্রচ্ছন্ন ভাবে কাস্টোমারদেরকে একটা মেসেজ দেয়া হচ্ছিল না যে বাংলাদেশে এরোমেটিক বাদে বাকি সব সাবান হারাম? রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে মিসইন্টারপ্রিটেশন হতে পারে এরকম একটা ট্যাগ ব্যবহার করে কাস্টোমার উইন করা এবং অন্যান্য কোম্পানিকে ডাউন দেয়া কি এথিক্যাল?

লক্ষ্য করুন, এই উদাহরণের উদ্দেশ্য স্পেসিফিকালি এরোমেটিককে নিয়ে আলোচনা করা না। বরং এথিকস এর বাউন্ডারিটা যে গ্রে, বিশ্বের সবচেয়ে নামীদামী কোম্পানি থেকে শুরু করে ছোট বড় মাঝারি অনেক কোম্পানিই যে মাঝে মাঝে এথিকাল বাউন্ডারির ওপাশে গিয়ে এক্কা দোক্কা খেলে আসে এটাকে তুলে ধরা।

আমি আবারো উপরে বলা একটা কথা রিপিট করি – The primary purpose of a business is to maximize profits for its owners or stakeholders while maintaining corporate social responsibility.

প্রাইমারি অবজেক্টিভ এর প্রথম অংশ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় কোম্পানি এথিক্যাল বাউন্ডারি ক্রস করে। বিকাশ এবং নগদের মতো কোম্পানির বিভিন্ন এক্টিভিটিতে তাই আমাদের সামনে বারবার এথিকস ইস্যু উঠে আসে।

কম্পিটিশনের অভাবে কাস্টোমারের কাছ থেকে বেশি চার্জ করা, ‘ব তে বেকুব’ টাইপের ক্যাম্পেইন, বিভিন্ন অফারের সময় চোখে পড়ে না এমন মাইক্রোস্কোপিক টেক্সটে কন্ডিশন জুড়ে দেয়া তাই আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এগুলো লিগ্যাল বাউণ্ডারি মেইনটেইন করলেও এথিক্যাল ইস্যুকে বারবার সামনে নিয়ে আসে। অভিবাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককেও তাই মাঝে মাঝে দুই অপারেটরকে ডেকে দুষ্টু বালকদের মতো মৃদু মন্দ শাসন করে দিতে হয়।

The Art of War!

বাংলাদেশের MFS ইন্ডাস্ট্রিতে বিকাশ এবং নগদের উপর স্ট্রাটেজিক কেইস স্টাডি কিন্তু আমাদের ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্সদের জন্য একটা চমৎকার লার্নিং অপরচ্যুনিটি।

এর আগেও আমি তাই 2019 সালে Daily Star এ একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম ‘How bKash became the most loved brand of the country’। 2021 সালে সোশ্যাল মিডিয়া এবং Idean Consulting Blog এ কেইস স্টাডি লিখেছিলাম ‘Bkash Vs Nagad: Our Own ‘Game Of Thrones’!

সারা জীবন ধরে আমরা শুধু দেখে এসেছি বাইরের Fedex vs UPS, Coca-Cola vs Pepsi, Apple vs Samsung ব্র্যান্ড ওয়ার।

এখন আমরা উপভোগ করছি আমাদের নিজেদের homegrown কোম্পানিগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, শিখবো নতুন নতুন টেকনিক এবং স্ট্র্যাটেজি, শান দেব নিজেদের স্কিল সেটেও।

বিকাশ এবং নগদের মতো কোম্পানিগুলোর কাছে আমাদের চাওয়া থাকবে তারা ইনোভেশন, স্ট্র্যাটেজি কাজে লাগিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের উপকার হয় এমন আরো উন্নত সার্ভিস প্রদান করুক, সাস্টেইনএবল বিজনেস তৈরির পাশাপাশি এথ্যিকাল বিজনেস প্র্যাক্টিস বজায় রাখুক।

আর সেই সাথে আমাদের আলোচনাটাও চলুক…
আপনার মূল্যবান মতামত জানানোর জন্য আমন্ত্রণ রইলো।