গাযায় সাহায্যের টাকা এম্বাসিতে দিবেন নাকি অন্য কোথাও?

ফিলিস্তিনের জন্য আমাদের সাহায্য। অ্যাম্বাসিতে দিলে কোথায় যাবে আর কোথায় যাবেনা সেটার একটা ধারণা পাবেন শেষ পর্যন্ত পড়লে।

অনেকে সাহায্য পাঠান, তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য। আপনার টাকা কোথায় যাবে, সেটা জেনে পাঠানোই নিশ্চয় ভালো।

গাযার হসপিটাল গুলোতে আর কোনো জায়গা খালি নেই৷ আহতদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের রিসিপশন, ম্যানেজমেন্ট অফিস, এমপ্লয়ীদের থাকার জায়গা সহ সব কিছু খালি করে রোগীর সংকুলান হচ্ছেনা।

পাথর ছুঁড়ে ফিলিস্তিনি তরুণরা লড়ছে ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে
পাথর ছুঁড়ে ফিলিস্তিনি তরুণরা লড়ছে ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে

শুধু একদিনের অ্যাটাকে মারা গেছে ৪২ জন।
একই পরিবারের ১০ জন সবাই মারা গেছে।
মোট আহতের সংখ্যা ১৮শ ছাড়িয়ে গেছে।

আশ শিফা হসপিটালের নার্স শাইমা আহমেদ আল-জাজিরাকে বলেছে, একসাথে এত আহত সে আগে দেখেনি। বেশীরভাগের অবস্থা খুব খারাপ।

গাযার প্রতি ইঞ্চি জায়গা যেন তারা বোমা মেরে ধ্বংস করে ফেলবে।

গাযা খুবই ছোট একটা জায়গা। চারদিকে অবরুদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাজি করিয়ে সেখানে ইজরায়েল ল্যান্ড, এয়ার এবং সী ব্লক দিয়ে রেখেছে।

গাযার দুইপাশে ইজরায়েল, একপাশে মিশর, অন্যপাশে সমুদ্র।

ম্যাপে ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং গাজার অবস্থান
ম্যাপে ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং গাজার অবস্থান

বেশীরভাগ মানুষ বাস করে দারিদ্র্য সীমার নীচে। গাযাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওপেন এয়ার প্রিজন। কিছু মানুষ মাছ ধরে জীবন ধারণ করতো। ইজরায়েলী সী ব্লকেডের কারণে তারা সেটাও পারেনা। সমুদ্রে বেশীদূর যাওয়া যায় না। গেলেই ইজরায়েলী নেভি গুলি করে মেরে ফেলে, ধরে নিয়ে যায়।

গাযায় খাবার, অষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও ঢুকতে পারেনা। ইজরায়েল ঢুকতে দেয় না। গৃহনির্মাণ সামগ্রী ঢুকতে দেয় না।
কিছু পণ্য নেদারল্যান্ডস এর সমঝোতায় ঢুকে।
তুরস্কের সাথে ইজরায়েলের বাণিজ্য চুক্তির আওতায় তুর্কী জাহাজে ওষুধ আর জরুরী পণ্য গাযায় যায়।

২০১০ সালে ইজরায়েলী ব্লকেড ভেঙে ৬ জাহাজ জরুরী ত্রাণ সাহায্য নিয়ে গাযায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ত্রাণ সংস্থা İHH (İnsani Yardım Vakfı) ও ফ্রী গাযা মুভমেন্ট।

ভূমধ্য সাগর হয়ে ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার দিয়ে গাযায় ঢুকতে যাচ্ছিল জাহাজ গুলো।
গাযার নেভাল ব্লকেড ভাঙার জন্য এটা ছিল ৯ম প্রচেষ্টা।

ইজরায়েল হামলা চালিয়ে ৯জন এক্টিভিস্টকে খুন করে। ভূমধ্য সাগরে ইজরায়েলী নেভী স্পীড বোট আর হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে জাহাজের নিরস্ত্র লোকদের হত্যা করে।

এরপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়।

জাতিসংঘ তদন্ত করে জানায় যে, ইজরায়েলের এই অবরোধ লিগ্যাল। আবার জাতিসংঘেরই হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল তাদের রিপোর্টে জানায় আন্তর্জাতিক সীমানায় এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের ভায়োলেশন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইজরায়েলের কিছু হয়নি, স্বাভাবিকভাবেই।

তবে ইজরায়েল গাযার অবরোধ কিছুটা শিথিল করতে বাধ্য হয়।

এরপর থেকে তুরস্ক বাণিজ্য চুক্তির বিনিময়ে গাযাতে সাহায্য পাঠায়।

গত বছর ইজরায়েলকে কোভিড সামগ্রী বিক্রি করে তুরস্ক। তারা আমেরিকা, ব্রিটেন, ইতালী, স্পেন, নেদারল্যান্ডস সহ ইউরোপকে ফ্রীতে এইসব পণ্য পাঠিয়ে ব্যাপক প্রশংসা পায়। তবে ইজরায়েলকে গাযাতে সাহায্য পাঠাতে দেয়ার শর্তে এইসব পণ্য বিক্রী করে।

উল্লেখ্য চাইনিজ পণ্য গুলো যেমন মাস্ক আর পিপিই ফল্টি হওয়াতে ইউরোপের দেশ গুলো সেসব চায়নাতে আবার ফেরত পাঠায়। তখন তুরস্ক তাদের মাস্ক আর পিপিই সবাইকে ফ্রীতে দেয়।

যাই হোক, তুরস্কের কিছু ত্রাণ এভাবে ঢুকে। কাতার মিশর বর্ডার ব্যবহার করে মাঝেমধ্যে পাঠাতে পারতো। পরে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।

বাকী সব পণ্য চোরাইপথে গাযায় ঢুকে। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও। গাযা বাসী কিছু টানেল তৈরী করে রেখেছে। কিছু না শুধু, অসংখ্য। বলা হয় যে গাযা উপত্যকার সব বাড়ীই মাটির নীচে সুড়ঙ্গ দিয়ে কানেক্টেড।

২০১৪র যুদ্ধে ইজরায়েল গাযায় মার খাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে এটি ছিল একটি।
এই টানেল গুলো বের হয়েছে মিশরের কিছু বাড়ী দিয়ে। এদিক দিয়েই বাইরের জগতের সাথে শারীরিক যোগাযোগ রক্ষা করে হামাস।
হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন বা রেসিস্টেন্ট ফোর্স।

সোজা বাংলায় বললে মুক্তিবাহিনী। তারা গাযার নির্বাচিত সরকার।
হামাসকে পলিটিক্যাল সাপোর্ট দেয় কাতার আর তুরস্ক। অস্ত্র সহায়তা দেয় ইরান। ইরান থেকে অস্ত্র গুলো আসতো সমুদ্রপথে।

ইজরায়েলী ইন্টেলিজেন্স এর ভাষ্যমতে খার্তুম বন্দর হয়ে দুনিয়ার পথ ঘুরে এগুলো গাযায় ঢুকতো।
২০১৪তে এমন কয়েক জাহাজ অস্ত্র ইজরায়েলী নেভি আটকও করেছে।

হামাসের টানেল গুলো মিশরের সামরিক শাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি বন্ধ করে দিয়েছে, বাড়ী গুলো গুড়িয়ে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে এক সাক্ষাতের পর ট্রাম্পের অনুরোধে সীমান্তে উঁচু উঁচু দেয়াল দিয়ে দিয়েছে।

আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি তুরস্ককে প্রতিরোধ করার জন্য গ্রীস আর ইজরায়েলের সাথে মিলে ভূমধ্যসাগরে জোট গঠন করেছে। সেই জোটে আরব আমিরাতও আছে।

লিবিয়াতেও কাতার আর তুরস্কের বিপক্ষে ইজরায়েল আর ইউএই (সংযুক্ত আরব আমীরাত) এর সাথে মিলে মিশর বিপক্ষে যুদ্ধ করছে। অর্থাৎ সেখানে এক পক্ষে কাতার আর তুরস্ক আর অন্য পক্ষে মিশর, ইউএই এবং ইজরায়েল। (এটা খুব সংক্ষেপে শুধু একটু ধারণা দেয়া। যারা জানেন না তাদের জন্য।)

মুরসী ক্ষমতায় এসে গাযাবাসীর জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। প্রকাশ্যে বলেছিলেন- ফিলিস্তিনের জনগণের কষ্ট আমাদের কষ্ট। ওদের চাওয়াই আমাদের চাওয়া। সীমান্ত আর টানেল গুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

মিশরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ইজিপ্টস ফার্স্ট ফ্রীলি ইলেক্টেড প্রেসিডেন্ট।
এক বছরের মধ্যে সিসি অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।

মুরসীকে কারাগারে নিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসি দেয়।
কারাগারে থাকা অবস্থায় মুরসী কুরআন চেয়ে পাননি। এ নিয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- “ওদের কাছে আমার কক্ষে এক কপি কুরআন দিতে বলেছিলাম। ওরা দেয়নি। ওরা জানেনা, চল্লিশ বছরের বেশী সময় ধরে এই কুরআন আমার মুখস্ত, আমি শুধু একটু ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলাম।”

যাই হোক, হামাস তথা গাযাকে অন্য কোনো আরব দেশ সহায়তা করেনা। উল্টো তারা এখন ইজরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব করে নিচ্ছে।
এখানে কথা প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা তথ্য উল্লেখ করা যায়। তুরস্ক পৃথিবীর প্রথম মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ১৯৪৯ সালে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। তখন ক্ষমতায় ছিল সেক্যুলার কামালিস্ট সরকার।

কামালিস্ট বলা হয় মোস্তফা কামালের আইডিওজলি যারা ধারণ করে তাদের। কামালের দল হচ্ছে এরদোয়ানের একে পার্টির বিরোধী দল। এই মোস্তফা কামাল খেলাফত বিলুপ্ত করে, আলেমদের ফাঁসি দেয়, আরবীতে আজান নিষিদ্ধ করে, কুরআন নিষিদ্ধ করে, হিজাব নিষিদ্ধ করে, দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবী-বোরখা সব নিষিদ্ধ করেছিল।
ইসলাম নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।

এরদোয়ান এই নিষেধাজ্ঞা গুলো আস্তে আস্তে তুলে নেয়। সর্বশেষ হিজাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
শুধু হিজাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলায় তার দল প্রায় নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছিল। আদালতে গড়িয়েছিল এই মামলা।

ঈদের নামাজের পর ডোম অব দ্য রক’র সাথে ছবি তুলছেন ফিলিস্তিনি নারী। ছবি- রয়টার্স

সৌদি আরবের একটা বড় দানের অংশ ফিলিস্তিনে প্রতি বছর যায়। কিন্তু সেটা হামাস শাসিত গাযাতে যায় না, ফাতাহ শাসিত ওয়েস্ট ব্যাংক তথা পশ্চিম তীরে যায়।

পশ্চিমতীরে ফাতাহ ইজরায়েলের অনেক গুলো শর্ত মেনে নিয়েছে। যেমন ফিলিস্তিন সরকার কোনো অস্ত্র রাখতে পারবে না, ফিলিস্তিনের কোনো আর্মী থাকবে না। পুলিশের কোনো ভারী অস্ত্র থাকবেনা। এই পুলিশ ইজরায়েলী পুলিশকে সহায়তা করবে।

জেরুজালেম

এজন্য পশ্চিমতীরে ইজরায়েলী পুলিশ যখন তখন ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ী দখল করে নেয়। তাদেরকে বের করে দেয়। রাত বিরাতে তল্লাশী চালিয়ে মেয়েদেরকেও ধরে নিয়ে যায়।
বিনিময়ে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনীরা ইজরায়েলে গিয়ে চাকরী করতে পারে।

কাজ করে টাকা আয় করতে পারে। সেখানে যেকোনো পণ্য, মানুষ, সাহায্য জর্ডান হয়ে ঢুকতে পারে।
ইজরায়েলের ক্ষতি হবে এমন কোনো টেকনোলজি বা অস্ত্র ছাড়া অন্য কিছুতেই ইজরায়েল বাধা দেয় না।

ইজরায়েল যেকোনো সময় যেকোনো কিছুতে তল্লাশী চালানোর ক্ষমতা রাখে। আল আকসা মসজিদেও তারা নিয়মিত তল্লাশী চালায়। সেখানে বেশীরভাগ যুবকদের নামাজ পড়তে দেয়া হয়না। গেইটেও সবাইকে তল্লাশী করে। রাস্তায় ইজরায়েলী সিকিউরিটি ফোর্স তল্লাশী চালায়।
অর্থাৎ ভূমি ফিলিস্তিনের কিন্তু শাসন ক্ষমতা ইজরায়েলের।

এখানকার নাগরিকরা প্রতিবাদ করে, ছুরি মারে, পাথর ছুড়ে। এর বেশী কিছু করার নেই। এবার পশ্চীম তীরে প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনী আহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে ২৩ জন ফিলিস্তিনী।

ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে পাথর ছুঁড়ে ফিলিস্তিনিদের লড়াই
ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে পাথর ছুঁড়ে ফিলিস্তিনিদের লড়াই

অন্যদিকে হামাস কোনো শর্ত না মানায় ইজরায়েল সেখানে কিছুই ঢুকতে দেয় না। ইজরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর এডভাইসর ডোরে গোল্ড প্রকাশ্যেও বলেছিল, হামাস যদি ফাতাহর মত অস্ত্র জমা দিয়ে দেয় আর ইজরায়েলী শর্ত মেনে নেয় তাহলে এই অবরোধ খুলে দেয়া হবে। তাদেরকে চাকরী দেয়া হবে।

বলাই বাহুল্য, হামাস এসব মেনে নেয়নি। নেয়নি তো নেয়নি, তারা নিয়মিত অস্ত্র বানায়, মিসাইল বানায়। সেগুলো দিয়ে প্রতিরোধ চালায়। ইজরায়েলে আক্রমণ করে। ইজরায়েলী কোনো পুলিশ বা আর্মী গাযায় প্রবেশ করতে পারেনা। এজন্য ইজরায়েলও সেখানে কিছু ঢুকতে দেয় না, তাই এখনো অবরোধ চলছে।

এক সপ্তাহ আগে ইজরায়েলী ডিফেন্স ফোর্স সীমান্তে ট্যাংক নিয়ে, রিজার্ভ ৯ হাজার সেনা সহ গাযা সীমানায় এসেছিল। আইডিএফ টুইট করেছিল- তারা রাতের মধ্যেই গাযার দখল নেবে।
বলাবাহুল্য, এখনো তারা গাযায় ঢুকতে পারেনি। পরে টুইট ডিলিট করে দিয়েছে।

ইসরাইলের ট্যাংকে ঢিল ছুড়ছে ফিলিস্তিনি শিশু

তবে আকাশ পথে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। হামাস ভূমিতে ইজরায়েলকে ঠেকিয়ে দিলেও আকাশে ঠেকানোর ক্ষমতা নাই। তাদের কোনো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নাই।
হামাসের রকেট হামলায় ১২ জন ইজরায়েলী মারা গেছে এখনো পর্যন্ত, আহত হয়েছে ৭৯২ জন।

ইজরায়েল এক দিনে ৪২ জনকে হত্যা করেছে। এক সপ্তাহ ধরে হামলা করছে। দুইশ জনের মত শহীদ হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধশতাধিক নারী এবং ৬৭ জন শিশু। ১৮০০ জনের বেশী আহত হয়েছে।
তারা আলজাজিরা আর এপির অফিস আছে যে বিল্ডিংয়ে, সেটিতে বিমান হামলা করে ধ্বংস করে দিয়েছে।

এর আগে আল আকসা টিভি, টিআরটি এরাবিকের অফিসের বিল্ডিংয়ে করেছিল হামলা। ইজরায়েল চাচ্ছে সেখানের কোনো খবর যেন আমরা না দেখি।

তারা অষুধের ফ্যাক্টরিতে হামলা করেছে। যাতে অষুধের অভাবে মারা যায়। ২০১৪তে তারা হসপিটালের উপর হামলা করেছিল। গ্যাস আর ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছিল।
আজকে তারা লাইব্রেরী ধ্বংস করে দিয়েছে।

সবচেয়ে বেশী সাহায্যের দরকার গাযাতে। ফিলিস্তিনি দূতাবাস সাহায্য পাঠানোর কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সেখানে যে সাহায্য দেব, সেগুলো গাযায় যায় না, যাবে পশ্চিমতীরে। কারণ পৃথিবী জুড়ে যে ফিলিস্তিনী দূতাবাস বা মিশন গুলো আছে, সেগুলো মূলত ফাতাহ বা পিএলওর। হামাসের অফিস আছে কেবল কাতারে।

পশ্চিমতীর থেকে গাযায় যাওয়ার সম্ভবনাও খুবই ক্ষীণ। কারণ ফাতাহ সরকার হামাসের কর্মকর্তাদের বেতনই দেয় না। তাছাড়া মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ সরকার কখনোই ইজরায়েলী অনুমোদনের বাইরে গাযায় কিছু পাঠাতে পারেনা। সেই সক্ষমতা তাদের নাই।

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে।

কিন্তু মাহমুদ আব্বাস অবৈধভাবে আবার ক্ষমতা দখল করে নেন।
তখন থেকে ফাতাহ পশ্চিমতীর শাসন করে আর হামাস গাযা শাসন করে।

পশ্চিমতীরেও সাহায্য পাঠানোর দরকার আছে। নিরস্ত্র জনগণের উপর হামলা করে প্রায় ৭ হাজার জনকে আহত করেছে ইজরায়েলী পুলিশ।
মারা গেছে ২৩ জন। কিন্তু এতে ফাতাহ বা মাহমুদ আব্বাস কিছু কর‍তে পারেন না। কারণ তাদের কোনো অস্ত্র নাই, ক্ষমতাও নাই।

প্রতিদিন ঘরবাড়ী হারিয়ে পশ্চিম তীরের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানের জন্য বিকাশ তাদের অ্যাপে ডোনেশনের ব্যবস্থা করেছে। যার মাধ্যমে যে কেউ পাঠাতে পারবেন। কিন্তু গাযার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। প্রতিদিন বিমান হামলা চলছে।

নেতানিয়াহু গাযাতে আক্রমণ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। আরো কী ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে আল্লাহ জানেন। তাদেরকে সাহায্য করাটা অনেক দরকার।

কাতার ২০১৪ সালে ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠায় গাযাতে। এটা ছিল গাযায় সবচেয়ে বড় সাহায্য। এরপর থেকে বছরে দুই তিনবার করে কখনো ১৫০ মিলিয়ন, কখনো ৩৫০ মিলিয়ন এভাবে পাঠায়।

২০১৮তে গাযা আর পশ্চিমতীরের জন্য কাতার ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠায়। এর বাইরে প্রতি মাসে গাযায় প্রতি মাসে ২০ মিলিয়ন করে পাঠাতো, ২০২০ এ সেটা বাড়িয়ে ৩০ মিলিয়ন করেছে। এর বাইরে নিয়মিত ফুয়েল পাঠায়।

কিন্তু কাতারের একার সাহায্যে এতগুলো মানুষের জীবন ধারণ করা খুব কঠিন। তার উপর ইজরায়েল যখন বম্বিং করে পুরো ধ্বংস করে দিয়েছে।

গাযার জন্য ওয়ান ন্যাশন সারা পৃথিবী থেকে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে। বাংলাদেশেও একটি ফাউন্ডেশনকে তারা অনুমোদন দিয়েছে।

গাযার জন্য সবচেয়ে বেশী কাজ করে যে সংস্থাটি সেটি হচ্ছে তুরস্কের IHH আর ফ্রী গাযা মুভমেন্ট।
যারা সরাসরি গাযা উপত্যকায় অর্থ সহায়তা পাঠাতে চাইবেন, তাদের জন্য নীচে লিংক সংযুক্ত করে দিলাম।

One Nation/অগ্রদূত ফাউন্ডেশন:

নিচে ওয়ান নেশনের অথরাইজড অগ্রদূত ফাউন্ডেশন এর ফান্ডরাইজিং লিংক দেওয়া হলো। গুগল ডক লিংকে যেয়েও দেখা যাবে যে কত এমাউন্ট জমা হয়েছে। তবে এটার জন্য টাইম লাগবে। কারণ সকল অনুদান একত্র করে একবারেই কার্ড এর মাধ্যমে টাকাটা এড করা হবে।  আশা করা যায় আগামী ২২ মে,২০২১ এ ডোনেশন জমা কর‍তে পারবে।

অগ্রদূত ফাউন্ডেশন কিভাবে গাজা’ তে সহায়তা পাঠাবে?

গাজাতে সরকারি দলের প্রবেশধিকার সীমিতি/না থাকলেও ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারড চ্যারিটি গুলোর আছে। তেমনি একটি হলো One Nation. যাদের ওয়েস্টব্যাংক, জেরুজালেমে ও গাজা উপত্যকায় প্রবেশধিকার আছে। বলে রাখা ভালো, One Nation বিধস্ত সিরিয়ার জন্যেও কাজ করে। তবে এখন শুধুমাত্র গাজা এর জন্য ডোনেশন নেওয়া চলছে।

অগ্রদূত ফাউন্ডেশন One Nation এর পক্ষে ফাইন্ডরাইজ করার সুযোগ পেয়েছে। যেটার ক্যাম্পেইন নামঃ ‘Gaza Emergency Appeal 2021’

আপনাদের দেওয়া সকল অনুদান অগ্রদূত ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে জমা দেয়া হবে উক্ত ক্যাম্পেইন এ। আর এই ডোনেশন দেওয়া-নেওয়ার জন্য One Naton ব্যবহার করছে জনপ্রিয় Give Brite ফান্ডরাইজিং ওয়েবসাইট।

অগ্রদূত ফাউন্ডেশনের পার্সোনাল মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার। সেন্ড মানি করতে হবে।

বিকাশ:01620533748

রকেট:016205337484

নগদ: 01902220259

সেন্ড মানি করার সময় রেফারেন্স এ নিজের নাম দিবেন। অথবা এডমিন কে জানাবেন।

ফান্ডরাইজিং লিংকঃ

https://givebrite.com/gaza-emergency-appeal-2021/agroduutfoundation

এছাড়া ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দিয়ে সরাসরি ওয়ান নেশনে ডোনেট করতে পারেন এই লিংকে https://onenationuk.org/projects/gaza-appeal/gaza-under-attack

গুগল ডক লিংক:
https://docs.google.com/document/d/1lClp7A2imn90G1qBvFrSp54jjlcI2s0z9lutpgijyU0/edit?usp=sharing

Page link: https://www.facebook.com/ogroduut.foundation/

IHH

গাজায়  আর্থিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্থ মাধ্যম হল তুরস্কের সবচেয়ে বড় এনজিও IHH। যাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে গাজায় কাজ করার। ১০০% বিশ্বস্থ, এ ব্যাপারে পুরোপুরি গ্যারান্টি দিতে পারি। আপনার কষ্টে অর্জিত টাকা যথাযথ মানুষগুলোর নিকটই পৌছবে। তারা গাজায় জরুরী সহায়তা ক্যাম্পেইন করছে। আপনারা চাইলে ব্যাংক কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নিজেই সরাসরি সহায়তা করতে পারেন। নিন্মোক্ত লিঙ্কে গিয়ে হেল্প করা যাবে। সর্বনিন্ম সম্ভবত ৫৫ টাকার মত (তুর্কি ৫ লিরা) দিতে হবে। সর্বোচ্চ যত দিতে চান দিতে পারবেন। তুরস্কে যারা আছেন তারা কয়েক সেকেন্ডে খুব সহজেই কাজটা শেষ করতে পারেন।

পাশাপাশি তাদের ব্যাংক একাউন্টসমূহেও সরাসরি পাঠাতে পারেন। তাদের একাউন্ট নম্বরসমূহ পাবেন এই লিঙ্কে:

IHH এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনুদান দিতে ভিজিট করুন তাদের ওয়েবসাইট https://www.ihh.org.tr/en/account-number

এম্বাসিতে দেয়ার ক্ষেত্রে

Embassy of the state of Palestine ,Dhaka,Bangladesh তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ডোনেশন গ্রহণ সংক্রান্ত অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়েছে। নগদের সাথে বিকাশ এবং উপায় মার্চেন্ট একাউন্টও যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও বিকাশ, নগদ ও উপায় এপের ডোনেশন অপশনে গিয়ে ‘ফিলিস্তিন দূতাবাস ঢাকা’ কিংবা ‘Embassy of the state of Palestine, Bangladesh’ সিলেক্ট করে অনায়াসে ডোনেশন পাঠাতে পারবেন।

এছাড়া UCB’র ব্যাংক একাউন্ট তো আছেই। একাউন্ট নাম্বারে দিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া সরাসরি এম্বাসিতে গিয়েও আপনার ডোনেশন হাতে হাতে দিয়ে আসতে পারেন।

গতকাল (১৯ মে ২০২১) প্যালেস্টাইন দূতাবাসের এম্বাসেডরের সাথে কথা বলার সময় তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে ফান্ড গাজায় পৌঁছাবে। তিনি এও বলেছেন যে ঔষধ পাঠাতে সময় লাগবে, ইসরায়েলের ইচ্ছাকৃত খামখেয়ালির কারণে ঔষধ পৌঁছাতে ৪-৫ মাস সময়ও লেগে যেতে পারে।

কিন্তু, নগদ অর্থ সরাসরি গাজায় পৌঁছাতে কোন বাঁধা নাই।

তবে একসাথে অনেক অর্থ পাঠাতে বাঁধা আসতে পারে, ভেঙে ভেঙে অল্প অল্প করে পাঠাতে কোন বাঁধা নাই।

উদাহরণ স্বরুপ বললেন, ধরুন প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকার কোন পরিবারে কাছে অর্থ পাঠানো হবে। একটি পরিবারের কাছে ৫০০/৬০০ ডলার পাঠাতে কোন সমস্যা হবে না।

কিন্তু, হাজার ডলারের উপর পাঠাতে গেলে বিপত্তি ঘটতে পারে।  তাই অনেক মাধ্যম থেকে অল্প অল্প করে বেশি সংখ্যাক পরিবারের কাছে ফান্ড পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

আপনি উপরের যেকোনো মাধ্যমেই টাকা পাঠাতে পারবেন।